আবছায়া জানলার কাচ......শুক্রবার সুমন বল্লভের ছবি।
কিছুটা আগেই তার আগমনের পূর্বাভাস থাকলেও সেটাকে সে সত্যি হতে দেয়নি। তার পরেও টালবাহানা করেছে বিস্তর। অবশেষে নির্দিষ্ট তারিখের চার দিন পরে, শুক্রবার কেরলে ঢুকেছে বর্ষা। রাতেই তা ছড়িয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ভারতের একাংশে। কিন্তু এতে দক্ষিণবঙ্গের খুশি হওয়ার কারণ দেখছেন না আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বর্ষার যা মতিগতি, তাতে দক্ষিণবঙ্গে স্বস্তির আশা দূর অস্ত্।
অর্থাৎ দক্ষিণবঙ্গবাসীকে আরও কিছু দিন ভ্যাপসা গরমে ঘেমেনেয়ে অস্বস্তি পোহাতে হবে। এ দিন অবশ্য কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, ওড়িশা ও সংলগ্ন এলাকায় একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার প্রভাবেই কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই বৃষ্টি বাতাসের আর্দ্রতা আরও বাড়িয়ে দেবে। তাই অস্বস্তি বাড়বে বই কমবে না।
নাকাল করা গরম থেকে রেহাই পেতে টানা বর্ষাই একমাত্র দাওয়াই। কিন্তু সেই বর্ষা কবে বাংলায় আসবে, তার হিসেব করতে গিয়েই ফাঁপরে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণত কেরলে বর্ষা ঢোকার দিন সাতেকের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে তার চলে আসার কথা। কিন্তু এ বছর মৌসুমি বায়ুর হাবভাব যা, তাতে কেরলে ঢোকার পরেও তার বঙ্গ-অভিযানের দিনক্ষণ বলতে পারছেন না আবহবিজ্ঞানীরা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, ‘‘বর্ষা কবে আসবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে তার যে দেরি হবে, সেটা নিশ্চিত।’’ বর্ষার পূর্বাভাস দিতে গিয়ে আবহবিদেরা বারবার অসুবিধায় পড়ছেন কেন? আবহবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, কিছু দিন ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি রয়েছে। সমুদ্রবিজ্ঞান একেই বলে ‘এল নিনো’। এল নিনো পরিস্থিতি বর্ষার উপরে কুপ্রভাব ফেলে। দুর্বল করে দেয় মৌসুমি বায়ুকে। এ বার সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বর্ষার আগমন-ছন্দটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এল নিনোর কারণেই এ বার কেরলে বর্ষার পূর্বাভাস দিতে গিয়ে ঠকে গিয়েছে মৌসম ভবন বা কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর। তারা জানিয়েছিল, এ বছর ৩০ মে, নির্ঘণ্টের কিছু আগেই কেরলে বর্ষা ঢুকবে। কিন্তু সেই পূর্বাভাস মেলেনি। বরং এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আরবসাগরের একাংশে থমকে গিয়েছিল বর্ষা। মৌসম ভবন সূত্রের খবর, দিন দুয়েক আগে মৌসুমি বায়ু কিছুটা জোর পেয়েছিল। তার প্রভাবেই কেরল উপকূলে বৃষ্টি শুরু হয়। সেই বৃষ্টি দেখেই বর্ষার আগমনী (প্রাক্বর্ষা) জানিয়েছিল হাওয়া অফিস।
এ দিন সকালে মৌসম ভবন ঘোষণা করে, কেরল দিয়ে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। পরে সংলগ্ন তামিলনাড়ু এবং কর্নাটকের একাংশেও ছড়িয়ে পড়েছে সে। দু’সপ্তাহ মায়ানমারে আটকে থাকার পরে এ দিন উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকেও সরে এসেছে মৌসুমি বায়ু। আবহবিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস, মায়ানমার হয়ে দিন দুয়েকের মধ্যে উত্তর-পূর্বে ঢুকে পড়তে পারে বর্ষা। সে-দিক থেকে বর্ষণ আশা করতে পারে উত্তরবঙ্গও। তবে বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, এ বার মৌসুমি বায়ু খুব জোরালো নয়। তাই উত্তর-পূর্ব ভারতে ঢোকার পরের দিনই বর্ষা উত্তরবঙ্গে ঢুকবে, নাকি ফের থমকে যাবে, তা নিশ্চিত নয়।
বাংলায় বর্ষা যখনই আসুক, বর্ষণে খামতি থাকবে বলে আগেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রেই কেন্দ্রের আশ্বাস, বৃষ্টি কম হলেও চাষিরা বিপদে পড়বেন না। এ বারেও ডিজেল, বিদ্যুৎ, বীজের উপরে ভর্তুকি মিলবে। এ দিন দিল্লিতে আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ জানান, খরা পরিস্থিতি এলে তার মোকাবিলা করতে সরকার প্রস্তুত। খরার মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার অধীনে বরাদ্দ অর্থ থেকে রাজ্যগুলিকে ১০ শতাংশ করে সরিয়ে রাখার নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্র।