দুর্ঘটনায় মৃত ছেলের অঙ্গদানে অঙ্গীকার মায়ের

হাসপাতালে মরণাপন্ন ছেলের বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মা। পাশে দাঁড়ানো ডাক্তারদের হাতে ধরা একটি ফর্ম। মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকারপত্র। চিকিৎসকদের অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, যুবক ছেলেকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখে মা হয়তো সই করবেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৯
Share:

অর্কপ্রভ বাউল

হাসপাতালে মরণাপন্ন ছেলের বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মা। পাশে দাঁড়ানো ডাক্তারদের হাতে ধরা একটি ফর্ম। মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকারপত্র। চিকিৎসকদের অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, যুবক ছেলেকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখে মা হয়তো সই করবেন না। কিন্তু সে দিন উল্টোটাই ঘটেছিল। মৃত্যুর পরে ছেলে অর্কপ্রভর অঙ্গদানের ফর্মে সই করেছিলেন মনোরমা বাউল।

Advertisement

সে দিনটি ছিল ১৩ অগস্ট। বিশ্ব অঙ্গদান দিবস। মনোরমাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে জীবিত থাকতে বার বার অঙ্গদানের কথা বলতেন। ছেলের মুখে এমন কথা শুনলেই বকতেন তিনি। তবে ছেলেকে আর ফিরে পাবেন না, এটা বুঝতে পেরেই অর্কপ্রভর অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মনোরমাদেবীর কথায়: ‘‘আমার ছেলে মারা গেলেও ওর চোখ, কিডনি নিয়ে অনেকের সন্তান বেঁচে থাকবে।’’

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী, নদিয়ার বাসিন্দা অর্কপ্রভ বাউল (২৬) পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। চাকরি পেয়েছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস-এর চেন্নাই অফিসে। ঠিক ছিল, শুক্রবার, স্বাধীনতা দিবসের আগের দিনই বাড়ি ফিরবেন। সে দিনই ফিরেছেন বটে, তবে কফিনবন্দি হয়ে। অর্কপ্রভর পরিবার সূত্রের খবর, ৯ অগস্ট অর্কপ্রভ নিজের ফ্ল্যাটে ফিরছিলেন। সে সময় একটি বাস তাঁকে চাপা দেয়। এক জন অটোচালক অর্কপ্রভকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় আর একটি বড় মাপের হাসপাতালে। বুধবার গভীর রাতে সেখানেই ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

অর্কপ্রভর দুর্ঘটনার খবর পেয়েই কলকাতা থেকে মনোরমাদেবী ও তাঁর ভাই প্রণবকুমার বিশ্বাস চেন্নাই চলে গিয়েছিলেন। কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের শিক্ষক প্রণববাবু বলেন, ‘‘আমি চিকিৎসক হিসেবে অঙ্গদানের গুরুত্ব জানতাম। কিন্তু একমাত্র ছেলের এমন পরিণতির পরে ওর মা কী করবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম।’’ যদিও মনোরমাদেবী যে ভাবে কোনও দ্বিধা ছাড়াই ছেলের অঙ্গদানে সম্মতি দিয়েছেন, তাতে কিছুটা হলেও অবাক হয়েছেন প্রণববাবু। মনোরমাদেবীর সম্মতির পরেই অর্কপ্রভর চোখ, হৃৎপিণ্ড, যকৃত দেহ থেকে সরিয়ে নেন চিকিৎসকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন