মুকুল রায়। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চে হাজির থেকেও বক্তৃতার জন্য ডাক পাননি তিনি। সম্প্রতি বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বুধবার মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় তাঁর সামনেই বক্তৃতা করলেন মুকুল রায় এবং জানালেন, ‘‘২০১৯-এ কেন্দ্রে সরকারের নিয়ন্ত্রক হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
কদিন ধরেই মুকুলের দলত্যাগ ঘিরে জল্পনা ছড়াচ্ছিল। শোনা যাচ্ছিল, একদা তৃণমূলের ‘নাম্বার টু’ নাকি তৃণমূল ছাড়তে চলেছেন। মুকুল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করেছেন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল। সেই জল্পনা আরও উস্কে সম্প্রতি বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলেছিলেন, ‘‘আগামী দিনে অনেক নেতাই বিজেপিতে আসবেন।’’
গত সোমবার মমতার কাছে রাখি পরতে মুকুল নবান্নে গিয়েছিলেন। তার পরেই এ দিন মমতার সভায় মুকুলের সক্রিয় ভূমিকা দেখে তৃণমূলের অন্দরেও নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। দলীয় নেতৃত্ব অবশ্য এ সবে আমল দিতে রাজি নন। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘মুকুল আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সাংসদ। তাঁকে নিয়ে গুঞ্জনের কিছু নেই।’’ এ দিন সভাশেষে মুকুল ফেরেন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতেই। পাঁশকুড়ায় এ দিন তাঁর পুরভোটের প্রচার কর্মসূচি ছিল। তা আজ, বৃহস্পতিবার হবে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: যত সব বেয়াদবের দল, মন্ত্রীদের ধমক জেটলির
শুধু দলনেত্রীর মঞ্চে জায়গা করে নেওয়াই নয়, মুকুলের সুর এ দিন ছিল বিজেপি-বিরোধীই। তিনি বলেন, “যারা সংবিধান মেনে ক্ষমতায় এসেছিল, তারাই এখন সংবিধানে কুঠারাঘাত করছে। ভাগাভাগির রাজনীতি করছে।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পরে এ দিন মমতার সভায় মানস ভুঁইয়াও বলেন, “সাম্প্রদায়িক দানবের বিরুদ্ধে কোনও নেতা মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারেন? একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারেন।’’
এ দিন কলকাতায় রামমোহন গ্রন্থাগারে ‘খোলা হাওয়ার সন্ধানে’ নামের এক অনুষ্ঠানেও মুকুল থাকতে পারেন বলে গুঞ্জন চলছিল। কারণ বছর দুয়েক আগে মমতার সঙ্গে দূরত্ব তৈরির পরে ‘খোলা হাওয়া’র অনুষ্ঠান করেছিলেন মুকুলই। এ বার সেই অনুষ্ঠানে মুকুল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কয়েক জন বিধায়কের পাশাপাশি ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার এক সাংসদ। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পরেই তৃণমূলের ওই সাংসদের উপস্থিতি নিয়ে গোলমাল শুরু হয় প্রেক্ষাগৃহে। ওই সাংসদ সেখানে থাকলে অনুষ্ঠান চালানো যাবে না বলে স্লোগান, চেঁচামেচি করেন কিছু যুবক। শেষমেশ পণ্ড হয়ে যায় ওই অনুষ্ঠান। তৃণমূলেরই একটা অংশ ওই যুবকদের পাঠিয়ে অনুষ্ঠান ভেস্তে দিয়েছে বলে আয়োজকদের তরফে অভিযোগ।