তৃণমূলের জেতা বুথ লাল রঙে দাগাচ্ছেন মুকুল

ঠোঁটে শুধু মিটিমিটি হাসি। এ বারও তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, এখনও পিতৃপক্ষ চলছে। এই সময়ে ‘হিন্দু মতে’ কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। পুজো কাটুক তার পর দেখা যাবে কত ধানে কত চাল।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৫
Share:

সামনে ডাঁই করে রাখা গত পঞ্চায়েত ভোটের বুথভিত্তিক ফল। তৃণমূলের জেতা আসনগুলি লাল, শক্ত আসনগুলি হলুদ আর হারা আসনগুলি সবুজ রঙে দাগিয়ে রাখার কাজ চলছে। পূর্ব কলকাতার এক আবাসনের নিভৃত ডেরায় বসে এটাই এখন মুকুল রায়ের দিনলিপি। যাঁকে সদ্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতির পদ থেকে।

Advertisement

দলের সঙ্গে সম্পর্ক যখন স্রেফ সরু সুতোয় বাঁধা, তখন পঞ্চায়েত ভোটের ফল বিশ্লেষণে কেন ব্যস্ত মুকুল? শনিবার একান্ত আলাপে তাঁর জবাব, ‘‘আমি তো এখনও তৃণমূলে। রাজনীতি ছাড়া তো আমার জীবনে আর কিছু নেই। ফলে তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখব কী করে?’’

কিন্তু তাঁর তালিকায় তৃণমূলের জেতা আসন লাল রঙে দাগানো কেন? মুকুলের কাছ থেকে সরাসরি উত্তর মেলেনি। তাঁর ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, এখানে লাল মানে যেখানে তৃণমূলের জয় হবেই। নতুন করে কিছু করার নেই। শুধু ফলাফল বিশ্লেষণই নয়, মুকুল ব্যস্ত আরও একটি কাজে। একদা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত ধরে ধরে কারা ‘ক্ষমতায়’ রয়েছেন, আর কারা বসে গিয়েছেন তার তালিকাও তৈরি করছি। যদি ভবিষ্যতে কোনও কাজে লাগে।’’

Advertisement

কোন ভবিষ্যতের কথা বলছেন তিনি? তারও কোনও জবাব নেই। ঠোঁটে শুধু মিটিমিটি হাসি। এ বারও তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, এখনও পিতৃপক্ষ চলছে। এই সময়ে ‘হিন্দু মতে’ কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। পুজো কাটুক তার পর দেখা যাবে কত ধানে কত চাল।

আরও পড়ুন:খাদিম কর্তা মামলা নিয়ে সংশয়ে কোর্ট

যদিও গত মাসখানেক ধরে মুকুলকে নজরে রেখে সেই চাল মাপার কাজ করে চলেছে দল। সংসদীয় কমিটি থেকে দলীয় দায়িত্ব— সব কিছু থেকেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হালে কল্যাণীর একটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি থেকেও সরানো হয়েছে তাঁকে। কারণ দলনেত্রীর কাছে খবর পৌঁছেছিল, সেখানে বসেই নাকি তিনি বিক্ষুব্ধ নেতাদের একজোট করছিলেন। রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি ভোটে এ রাজ্য থেকে যে ক্রশভোটিং হয়েছে, তাতেও মুকুলেরই ‘হাতযশ’ দেখেছেন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। খবর এমনও রয়েছে যে, মুকুল রায়ের সঙ্গে এখন দিল্লির বিজেপি নেতাদের নিত্য ওঠাবসা চলছে। অথচ সারদা-নারদ তদন্তে কোনও ঢিলে ভাব দেখাচ্ছে না সিবিআই বা ইডি। তা হলে লাভ কী? প্রশ্ন দলেই।

ফলে মুকুলকে আর দলবিরোধী ‘শক্তিকেন্দ্র’ হিসাবে প্রশ্রয় দিতে নারাজ তৃণমূল। তবে মুকুল কী করবেন তা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। এ দিন মুকুলের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘ক্রিজে থাকলেই রান উঠবে।’’ যা শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি কি জ্যোতিষী নাকি? কী ভাবে বলব কে কোথায় রান তুলবেন।’’

তবে কেউ কেউ বলছেন, কলকাতায় এসে রাজ্যের ৭৭ হাজার পঞ্চায়েত-আসনে ‘বুথ রচনা’ করতে বলে গিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। যা আসলে করার কথা দিলীপ ঘোষের।

পূর্ব কলকাতার নিভৃত আস্তানায় বসে লাল-হলুদ-সবুজ রঙে সেই কাজই কি করছেন মুকুল?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement