Mundeswari River

প্রাণ পেতে চলেছে মুণ্ডেশ্বরী, সংস্কারে বরাদ্দ ২৭০০ কোটি টাকা, শীঘ্রই কাজ শুরু

অবশেষে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে কাজ শুরু হতে চলেছে হুগলি জেলায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া ও খানাকুল শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:০৪
Share:

শুখা: বর্ষার মরসুম বাদে এই অবস্থাই হয় মুণ্ডেশ্বরীর। হরিণখোলায়। — ফাইল িচত্র

অবশেষে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে কাজ শুরু হতে চলেছে হুগলি জেলায়। সেচ দফতর জানিয়েছে, দামোদর নদের প্রায় ৩৯ কিলোমিটার বাঁধের আমূল সংস্কার করা হবে। মুণ্ডেশ্বরী নদীর ১৯ কিলোমিটার অংশ জুড়ে পলি তোলা হবে। দুটি ক্ষেত্রেই দফায় দফায় কাজ হবে। পুরো কাজে ২৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

Advertisement

সেচ দফতর সূত্রের খবর, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকল্পটির নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেজর ইরিগেশন অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট স্কিম’। বন্যার ঝুঁকি কমাতে এবং সেচ ব্যবস্থায় উন্নতির লক্ষ্যেই এই প্রকল্প। প্রকল্পটির অনুমোদন মেলে ২০১৮ সালের শেষে। হুগলি ছাড়াও কাজ হবে বর্ধমান, হাওড়া, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায়। হুগলিতে কাজটি হবে মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই। কাজ করবে মুণ্ডেশ্বরী সেচ বিভাগ। দফতরের কর্তারা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ের কয়েকটি কাজের ওয়ার্ক অর্ডার ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। জেলা সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার যিশু দত্ত বলেন, “ফেব্রুয়ারি

মাসেই মুণ্ডেশ্বরী থেকে পলি তোলার প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। ধাপে ধাপে পরবর্তী কাজ হবে।”

Advertisement

মুণ্ডেশ্বরী সংস্কারের কাজ নিয়ে বুধবার হুগলিতে জেলাশাসকের দফতরে একটি বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সেচ দফতরের যুগ্ম সচিব দেবাশিস সেনগুপ্ত, সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার নয়নজ্যোতি ঘোষ, চিফ ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত দাস। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও-সহ প্রশাসনের অন্য আধিকারিক, জেলা পরিষদ, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির জনপ্রতিনিধি এবং আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, মুণ্ডেশ্বরী নদীর বর্ধমানের শেষ প্রান্ত বেগুয়াহানা থেকে কোটশিমূল হয়ে পুড়শুড়ার পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে আরামবাগের অরুণবেড়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার অংশে পলি তোলা হবে। প্রথম পর্যায়ে কোটশিমূল থেকে অরুণবেড়া পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে এই কাজ করা হবে। প্রায় ১৫০ মিটার চওড়া এবং ৩ ফুট গভীর করে পলি তোলা হবে। মুণ্ডেশ্বরীর সংস্কারের কাজ শুরু হলে খানাকুলের কিছু জায়গায় বোরো চাষে জলের সঙ্কট তৈরি হবে। সেই সঙ্কট কী ভাবে কাটানো যাবে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। ঠিক হয়েছে, বোরো চাষে জল দিতে আকবরি খালের মাধ্যমে বিকল্প পথে সেচের ব্যবস্থা করা হবে।

জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘ওই কাজে সেচ দফতরকে প্রয়োজনীয় সব রকম সহযোগিতা করা হবে জেলা প্রশাসনের তরফে। সংস্কার কাজ চলার সময়ে চাষিদের যাতে অসুবিধা না হয়, সেই চেষ্টা করা হবে।’’ সংস্কারের কাজের পর্যালোচনা করতে আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যের সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী খানাকুলে আসতে পারেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মুণ্ডেশ্বরীর পাশাপাশি রনের খাল সংস্কার করা হবে। দামোদর নদের বাঁ দিক বরাবর বর্ধমানের জামালপুরের সোনাগোড়িয়া থেকে পুরশুড়া হয়ে জাঙ্গিপাড়ার পশপুর পর্যন্ত প্রায় ৩৯ কিলোমিটার বাঁধের আমূল সংস্কার করা হবে। বন্যারোধের জন্য এই অংশে স্টিলের পাত দিয়ে দেওয়াল তৈরি করা হবে।

নিম্ন দমোদর প্রকল্পের সংস্কার নিয়ে আরামবাগ মহকুমার মানুষের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। তাদের অভিযোগ, বন্যা রোধে সরকারি স্তরে কেবলমাত্র প্রতিশ্রুতি মেলে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। তার ফলে খানাকুলের বিস্তীর্ণ এলাকা বর্ষার সময় প্লাবিত হয়। জলের স্রোতে কোথাও বাঁধ ভাঙে। কোথাও নদী গর্ভে ভাঙন হয়। এ বার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হলে সেই সমস্যা মিটবে বলে মহকুমাবাসী মনে করছেন। একই আশা সেচ দফতরের কর্তাদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন