বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ।
ভাঙড়-কাণ্ডের ক্ষত সারিয়ে সরকার যে সেখানে পাওয়ার গ্রিড নির্মাণের কাজ শেষ করতে বদ্ধপরিকর, শুক্রবার তা বুঝিয়ে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
এ দিন বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী তাঁর বক্তৃতায় ভাঙড়ের নাম না করেই বলেন, ‘‘আমার সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহের যথাযথ মান সুনিশ্চিত করা এবং কম ভোল্টেজের সমস্যা-পীড়িত স্থানগুলিতে দ্রুত এই সমস্যা দূর করার উদ্দেশ্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’’
দক্ষিণবঙ্গের গ্রামগুলিতে কম ভোল্টেজের সমস্যা মেটাতেই ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। কিন্তু জমি আন্দোলন এবং তাকে ঘিরে বিক্ষোভের সময় গুলিতে দুই গ্রামবাসীর মৃত্যুর পরে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন রাজ্যপালের বক্তৃতার পর শাসক শিবিরের অনেকের বক্তব্য, ভাঙড়ে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করারই বার্তা দেওয়া হল বিধানসভায়।
প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল বিধানসভায় যে বক্তৃতা দেন, তা সরকারই লিখে দেয়। রাজ্য মন্ত্রিসভা ওই বক্তৃতাকে অনুমোদন দেয়। ফলে রাজ্যপালের বক্তব্য আদতে সরকারেরই বক্তব্য।
তবে সরাসরি ভাঙড়ের প্রসঙ্গ রাজ্যপালের বক্তৃতায় না থাকায় এ দিন বিধানসভার মধ্যেই সরব হন বাম বিধায়কেরা। ভাঙড়ে ‘নিরীহ গ্রামবাসীদের উপরে পুলিশি নির্যাতনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এ দিন তাঁরা রঙিন অ্যাপ্রন পরে সভায় এসেছিলেন। রাজ্যপালের বক্তৃতা চলাকালীন অশোক ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তীরা ক্ষোভপ্রকাশও করেন। রাজ্যপাল বক্তৃতা শেষ করে বিধানসভা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই বাম বিধায়করা প্রবল স্লোগান তুলে প্রতিবাদ জানান। বামেদের বিক্ষোভের সময় কংগ্রেসের কেউ তাঁদের পাশে ছিলেন না। পরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান অবশ্য বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে ঘিরে প্রতিবাদ জানানোয় কোনও অন্যায় নেই। ওঁরা যা করেছেন, ঠিকই করেছেন।’’ বাম বিধায়কদের এ হেন আচরণে প্রবল চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। এর বিহিত চেয়ে তিনি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বাম বিধায়কদের আচরণের নিন্দা করে বিধানসভায় একটি প্রস্তাব পাশ করায় তৃণমূল। তবে এ সবে পিছু না হটে সুজন চক্রবর্তী-আব্দুল মান্নানরা এ দিন জানিয়েছেন, ভাঙড়ে কৃষক হত্যার ঘটনা নিয়ে বিধানসভায় তাঁরা বিতর্কের দাবি জানাবেন।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, বিরোধীরা যে ভাঙড়ের পরিস্থিতি অস্থির রাখতে চাইছেন, তা বুঝতে পারছেন মমতা। সে কারণেই এ দিন দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা বলেন, ‘মাও-মার্কস এবং মোদী বাহিনী রাজ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে অশান্তি তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু সেই প্ররোচনায় যেন কেউ পা না দেন’। ভাঙড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েমের পরামর্শও দেন মমতা।
এর পরেও অবশ্য প্রশ্ন উটছে। ভাঙড়ে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য তাড়াহুড়ো করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে না তো! সূত্রের খবর, ভাঙড়ের ক্ষত মেরামতে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। চিঠিতে তাঁর বক্তব্য, ‘ভাঙড়ের ঘটনার জন্য আরাবুল ইসলামকে দায়ী করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত করতে হলে আরাবুলের উপরে যে মাথা রয়েছে, তাঁকে আগে সবক শেখাতে হবে। তিনিই নাটের গুরু’। এ কথা বলে জেলার এক প্রভাবশালী নেতার দিকেই আঙুল তুলেছেন রেজ্জাক। তবে মমতা দলের অন্দরে জানিয়েছেন, ভাঙড় নিয়ে কেউ যেন বেঁফাস মন্তব্য না করেন। যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হবে, শুধু তাঁরাই বলবেন।