Amader Para amader samadhan

‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পে পঞ্চায়েত প্রধান থেকে বিধায়ক, হাজির হতে হবে সকলকেই! নয়া নির্দেশ নবান্নের

রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, এই ধরনের অংশগ্রহণমূলক প্রশাসনিক উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়াবে, এবং এলাকাভিত্তিক বাস্তব সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের পথ তৈরি করবে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এই প্রকল্পের তদারকির মাধ্যমে প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক তৎপরতাও আরও গতিশীল হবে বলেই আশাবাদী নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকেরা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৫ ১৪:৫৩
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আগামী ২ অগস্ট থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হচ্ছে নতুন জনমুখী কর্মসূচি — ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’। বুধবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জেলাশাসকদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন, যেখানে এই কর্মসূচির রূপরেখা স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়। মূল উদ্দেশ্য, মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এলাকার সমস্যার সমাধান এবং স্থানীয় স্তরে উন্নয়নমূলক কাজে অগ্রাধিকার স্থাপন। পাশাপাশি এই শিবিরগুলিতে যাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা যায়, সেই বিষয়ে জেলাশাসকদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি শিবিরে উপস্থিত থাকবেন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধান থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের হাজিরার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা ছাড়াও ব্লকের বিডিও, জয়েন্ট বিডিও, পঞ্চায়েত ও বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের উপস্থিত থেকে শিবির পরিচালনা করতে হবে। তাদের উপস্থিতিতেই এলাকার বাসিন্দাদের মতামত নিয়ে নির্ধারিত হবে কাজের তালিকা।

Advertisement

রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, এই ধরনের অংশগ্রহণমূলক প্রশাসনিক উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়াবে, এবং এলাকাভিত্তিক বাস্তব সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের পথ তৈরি করবে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এই প্রকল্পের তদারকির মাধ্যমে প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক তৎপরতাও আরও গতিশীল হবে বলেই আশাবাদী নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকেরা। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্য সরকার এই কর্মসূচির মাধ্যমে যেমন জনসংযোগ দৃঢ় করতে চাইছে, তেমনই নিচুতলার মানুষদের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আগামী বছর তৃণমূলের প্রতিনিধিরা বিধানসভা নির্বাচনে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবেন। তার আগে নিজেদের দাবিদাওয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এলাকার মানুষ যদি জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পান, তা হলে পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হতে পারে। আর সেই ফসল ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হতে পারে বলেই মনে করছে শাসকদলের একাংশ। তাই সর্ব স্তরের জনপ্রতিনিধিদের ময়দানে নামিয়ে জনসংযোগ নিবিড় করার কৌশলে নয়া এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনটাই মত রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের একাংশের।

Advertisement

তবে পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকদের কথায়, ‘‘এই কর্মসূচির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, বুথভিত্তিক বাসিন্দারাই ঠিক করবেন, তাঁদের এলাকায় কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সরকারি স্তরে আর নির্ধারণ করা হবে না প্রয়োজনীয় প্রকল্প। বরং এলাকাভিত্তিক শিবিরে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন এলাকার মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি আধিকারিকেরা।’’ প্রত্যেকটি এলাকা থেকে যে সমস্ত প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে, সেগুলি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, প্রকল্প গ্রহণ থেকে কাজ শেষ করা, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই সম্পন্ন হবে, এমনই আশা প্রশাসনের।

তবে একটি এলাকায় ১০ লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের কাজের প্রস্তাব এলে, সেটি ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের আওতায় পড়বে না। বরং সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হবে। এই নীতি কার্যকর করে প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও বাস্তবতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছে রাজ্য প্রশাসন। শিবিরে উপস্থিত প্রত্যেক নাগরিকের নাম রেজিস্টার খাতায় নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। এর ফলে প্রকৃত অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা জানা যাবে, এবং তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। সার্বিক ভাবে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পটি রাজ্যবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক চর্চার একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই মনে করছে প্রশাসনিক মহল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement