Nabanna

জেলাভিত্তিক জায়ান্ট স্ক্রিনে নজর-কৌশল

প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, নবান্নের সর্বোচ্চ স্তর থেকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে (বিশেষ করে পুলিশ সুপার এবং কমিশনারদের) যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রতিটি জেলা-সদরে একটি করে বিশেষ কন্ট্রোলরুম গড়তে হবে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:২৬
Share:

নবান্ন। —ফাইল চিত্র।

ভোট-হিংসা হোক বা গোষ্ঠী সংঘর্ষ, চুরি-ডাকাতি হোক বা খুন—আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিগত বেশ কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে। পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই গোয়েন্দা-তথ্যের অপ্রতুলতাও সামনে এসেছে বারে বারে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ বার জেলাভিত্তিক বৃহৎ ‘কমান্ড-সেন্টার’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছে নবান্নের সর্বোচ্চ মহল। যে ভবনের দেওয়াল জোড়া উচ্চ প্রযুক্তির পরিকাঠামোয় গোটা জেলার মূল এবং স্পর্শকাতর এলাকার ছবি সরাসরি সম্প্রচারিত
হবে সর্বক্ষণ।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, নবান্নের সর্বোচ্চ স্তর থেকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে (বিশেষ করে পুলিশ সুপার এবং কমিশনারদের) যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রতিটি জেলা-সদরে একটি করে বিশেষ কন্ট্রোলরুম গড়তে হবে। তার আয়তন হতে হবে কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গফুট। সেই পরিকাঠামোয় থাকবে দেওয়াল জোড়া বিশেষ প্রযুক্তির ‘এলইডি’। যেখানে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, রাস্তা, স্পর্শকাতর স্থানে থাকা ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরার ‘ফুটেজ’ সরাসরি সম্প্রচারিত হবে সারাদিন ধরে। কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা নজরদারি করে সংশ্লিষ্ট থানা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করবেন। সময় মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে কি না, তা-ও ধরা পড়বে ‘জায়ান্ট-স্ক্রিনে’। আবার তথ্য-প্রমাণ পেতে এবং দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতে সেই ছবি আরও কার্যকর হবে।

অভিজ্ঞ পুলিশ-কর্তাদের অনেকে জানাচ্ছেন, এমন পরিকাঠামো অন্যান্য অনেক দেশেই রয়েছে। কতকটা সেই আদলেই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে বলা হচ্ছে। জেলা পুলিশ সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে তেমন পরিকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় জমি জোগাড় করবেন। সেখানেই ভবন গড়ে তোলা হবে। প্রত্যেক জেলা প্রশাসন জমি খোঁজা শুরুও করেছে।

Advertisement

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অতীতে বগটুইয়ের একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা হোক বা সাম্প্রতিক জয়নগরের খুন এবং তার পরে বাড়ি বাড়ি আগুন লাগানোর ঘটনা, ধূলাগড়-উলুবেড়িয়ার সংঘর্ষ হোক বা ভোটের সময়ের হিংসা-মারামারি— সব ক্ষেত্রে গোয়েন্দা-তথ্যের অভাব প্রকাশ্যে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বারে বারে দিতে হয়েছে চোখ-কান খোলা রাখার বার্তা। প্রশ্নের মুখে স্থানীয় স্তরে পুলিশের নজরদারি এবং ভূমিকাও। অতীতের এমন নানা ঘটনায় নিচুতলার বহু পুলিশকর্মী বা আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও করতে হয়েছে। কিন্তু শুধু স্থানীয় স্তরে গোয়েন্দা-তথ্যের উপরে এখন আর পুরোপুরি নির্ভর করে থাকার সময় কার্যত নেই বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ আধিকারিকদের অনেকে। সেই কারণেই প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

তবে জেলা-কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, জমি জোগাড় করা, বিশেষ নকশায় ভবন নির্মাণ, সর্বোপরি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে একেকটি পরিকাঠামোয় প্রয়োজন ৭-৮ কোটি টাকা। ফলে কত দ্রুত ‘মিশন’ ভিত্তিতে এই প্রকল্প কার্যকর করা যাবে, তা এখনও অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে। যদিও অভিজ্ঞ আমলাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, অর্থের অভাব এ ক্ষেত্রে নেই। তাঁদের ব্যাখ্যা, পুলিশি আধুনিকিকরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পৃথক একটি শাখা রয়েছে। তাতে বছরে ৪০-৪৭ কোটি টাকা পাওয়া সম্ভব। তাতেই গোটা রাজ্যের সর্বত্র সিসি ক্যামেরা বসানোর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হয়েছিল। কলকাতার ক্ষেত্রে আবার ‘সেফ-সিটি’ প্রকল্পের পৃথক তহবিল থাকে (কেন্দ্র ও রাজ্যের ৬০:৪০ ভাগে)। আবার চলতি আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪) স্বরাষ্ট্র দফতরের জন্য প্রায় ১৩,৬৮৬ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরা বসাতে হচ্ছে প্রায় সর্বত্র। এ বার সেগুলির ভিডিয়ো এক দেওয়ালে সফল ভাবে আনা গেলে নজরদারি সহজ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন