আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের পদ থেকে সরিয়ে নিখিল নির্মলকে পাঠানো হল জনজাতি উন্নয়ন সমবায় নিগমের ম্যানেডিং ডিরেক্টর পদে ।
ফালাকাটার এক যুবককে মারধর করার পর দিন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক (ডিএম) নিখিল নির্মল ও তাঁর স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে জেনারেল ডায়েরি করল সেই থানার পুলিশ। একই সঙ্গে ডিএম-কে ১০ দিন ছুটিতে পাঠাল রাজ্য সরকার। নবান্নের এক কর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার প্রশাসনিক স্তরে তদন্ত হবে। সেই রিপোর্ট দেখার পরে ঠিক হবে, নিখিলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে কি না।
সম্প্রতি একটি ওয়েবসাইট দেশের সেরা দশ আমলার নাম প্রকাশ করেছিল। তাতে ছিলেন নিখিল নির্মল। আইএএস অ্যাসোসিয়েশন তখন সেই তালিকা টুইটও করেছিল। তারা এ দিন টুইটটি ডিলিট করার পাশাপাশি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘আইন হাতে তুলে নেওয়া অনুচিত। যে অফিসারেরা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, তাঁদের উচিত দেশের আইনকে সম্মান দেওয়া। এই ধরনের ঘটনা সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। এর জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে তাকে আমরা সমর্থন জানাব।’
নিখিল ও তাঁর স্ত্রী নন্দিনীর একটি ডিভিয়ো রবিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়। দেখা যায়, নন্দিনীকে কটূক্তি করার অভিযোগ তুলে নিখিল এক যুবককে ফালাকাটা থানার মধ্যেই বেধড়ক মারছেন। শোনা যায়, নিখিল বলছেন, ‘‘আমার জেলায় আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলবে না।’’ দেখা যায় নন্দিনীও মারধর করছেন যুবকটিকে। আনন্দবাজার এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি।
আরও পড়ুন: কাল আসুন, বলে দিল ফালাকাটা থানা
অভিযোগ পাওয়ার পরেই নবান্নের শীর্ষকর্তারা নিখিলকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর দায়িত্ব সামলাবেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) চিরঞ্জীব ঘোষ। চা বাগান এলাকায় ভাল কাজ করার জন্য নিখিল নবান্নের শীর্ষকর্তাদের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এ দিন তাঁর শাস্তি চেয়েছে জেলা তৃণমূলের একাংশও। সোমবার বহু চেষ্টা করেও নিখিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
যাঁর বিরুদ্ধে নন্দিনীর নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় কটূক্তি করার অভিযোগ, সেই বিনোদকুমার সরকারকে এ দিন আলিপুরদুয়ার আদালতে তোলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ (যৌন হেনস্থা), ৫০৯ (কোনও মহিলাকে অশ্লীল মন্তব্য করা) ও সাইবার আইনের ৬৭ নম্বর ধারায় (অন্তর্জালে অশ্লীল কিছু ছড়ানো) মামলা হয়েছিল। অভিযোগ করেছিলেন ফালাকাটার বিডিও সুপ্রতীক মজুমদার। এর মধ্যে ৩৫৪ নম্বর ধারাটি জামিন অযোগ্য। তবে সেই ধারা কেন দেওয়া হয়েছে, তার যুক্তি দিতে পারেননি সরকারি আইনজীবী। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারক বিনোদকে জামিন দেন।
সকালে আদালতে ঢোকার আগে বিনোদ অভিযোগ করেন, তাঁকে একটি গ্রুপে যোগ করে গালিগালাজ করা হয়। জামিন পাওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমিও রাগের মাথায় ভুল করেছি। এটা এখানেই শেষ করতে চাই।’’