গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দ্রুত ঋণ পাইয়ে দিতে পদক্ষেপ শুরু করেছে নবান্ন। তবে প্রশাসনিক ভাবে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক যৌথ উদ্যোগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দ্রুত ঋণ প্রদান নিশ্চিত করতে নতুন ভাবে উদ্যোগী হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। প্রশাসনের একাংশের মত, এর ফলে গ্রামীণ বাংলার আর্থিক কাঠামো আরও মজবুত হবে এবং স্বনির্ভর মহিলাদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও প্রসারিত হবে। পাশাপাশি আগামী বছর শাসকদলের পক্ষে গ্রামীণ ভোট টানতে সুবিধা হবে।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার ও স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স সাব-কমিটির যৌথ উদ্যোগে স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিষয়ক একটি পর্যালোচনাসভা আয়োজিত হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনের আধিকারিক এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী সংক্রান্ত বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা। আলোচনায় উঠে আসে, গত এক বছরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ঋণ সংযোগ কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেলেও কিছু জেলায় এখনও গতি আনতে হবে। সূত্রের খবর, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী দিনে ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় তৈরি করে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দ্রুত ও সহজে ঋণপ্রদান নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি, ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও ডিজিটাল করতে বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথাও ভাবা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে রাজ্যের এই উদ্যোগকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রামীণ মহিলা ভোটব্যাঙ্কের প্রতি বিশেষ মনোযোগের অংশ হিসাবেই দেখা হচ্ছে। তাদের দাবি, গত ১৪ বছরে মুখ্যমন্ত্রী যে প্রশাসনিক কর্মসূচিগুলির মাধ্যমে গ্রামের মহিলাদের আত্মনির্ভর করে তুলেছেন, এই পদক্ষেপ সেই ধারাবাহিকতাকেই আরও জোরদার করছে। পরিসংখ্যান বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের কারণে রাজ্যের বৃহৎ অংশের মহিলারা তৃণমূলের পক্ষে ভোট দান করেন। গ্রামীণ এলাকার মহিলারা অনেক ক্ষেত্রেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তাই নির্বাচনের আগে গ্রামীণ মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠী মারফত আর্থিক সহায়তা পেলে তা আরও সহায়ক হবে শাসকদল তৃণমূলের পক্ষে।
তবে প্রশাসনিক স্তরের ব্যাখ্যা ভিন্ন। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্প কোনও রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়, বরং দীর্ঘ দিন ধরে চলা একটি নিয়মিত কর্মসূচির অংশ। সারা বছরই রাজ্য সরকার ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ প্রদান করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করে। সরকারের দাবি, এ বারের উদ্যোগ সেই প্রক্রিয়াকেই আরও কার্যকর ও দ্রুততর করার প্রয়াস, যাতে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছোয়।