৩২ বছরে মা হয়েই মৃত্যুমুখে, কৈফিয়ত ডাক্তারের

সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সুখবর আসে সে দিন অর্থাৎ শনিবার বিকেলেই। ছেলে হয়েছে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, মা-সন্তান দু’জনেই ভাল আছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় খানিক পরেই। বন্ধ হয়ে যায় প্রস্রাব। ক্রমশ পেট ফুলতে থাকে তরুণীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৮
Share:

সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সুখবর আসে সে দিন অর্থাৎ শনিবার বিকেলেই। ছেলে হয়েছে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, মা-সন্তান দু’জনেই ভাল আছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় খানিক পরেই। বন্ধ হয়ে যায় প্রস্রাব। ক্রমশ পেট ফুলতে থাকে তরুণীর। শেষে প্রস্রাবের নালী দিয়ে রক্তক্ষরণ।

Advertisement

বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালের ঘটনা। পরের দিন সকালে ওই তরুণীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। সেখান থেকে ফের ঠিকানা বদল। বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি। বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক বিধুভূষণ মাহাতোর বিরুদ্ধে নাকাশিপাড়ায় থানায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতা চঞ্চলা সরকারের স্বামী। তাঁর অভিযোগ, ওই চিকিৎসকের গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্ত্রীর।

ঠিক কী ঘটেছিল?

Advertisement

পুলিশ সূত্রের জানা গিয়েছে, বছর বত্রিশের তরুণী চঞ্চলা সরকারের বাড়ি নাকাশিপাড়ার হরিনারায়ণপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী হরিপদ সরকারের কথায়, ‘‘গত শনিবার দুপুরে বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে আমার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে ভর্তি করি। সে দিন বিকেলেই ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বিধুভূষণ মাহাতোর তত্ত্বাবধানে আমার স্ত্রীর অস্ত্রোপচার করা হয়। ছেলে হয়। অস্ত্রোপচারের পর থেকে চঞ্চলার প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ক্রমশ পেট ফুলতে থাকে। এমনকী প্রস্রাবের নালি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পরের দিন সকালে আমার স্ত্রীকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চঞ্চলার অবস্থা খারাপ দেখে সেখান থেকে সে দিনই কল্যাণীতে রেফার করা হয়। কল্যাণীতে নিয়ে যেতে সেখানকার চিকিৎসকরা আমাকে জানান, ভূল চিকিতসার জন্যই স্ত্রীর এই হাল।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ কল্যাণীর জহরলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তরুণী।

বিধুভূষণবাবু অবশ্য চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, “অভিযোগ ঠিক নয়। সঠিক চিকিৎসাই হয়েছিল। ওই প্রসূতি বেশি বয়সে মা হয়েছেন। প্রথম সন্তান হয়েছিল ১৩ বছর আগে। ফের মা হলেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ওঁর হাইপ্রেসারও ছিল। এত দেরিতে মা হলে রক্তক্ষরনের আশঙ্কা থাকেই। এখানে অস্ত্রোপচারের পর প্রথম ১২ ঘন্টা মা ও শিশু কিন্তু ভালই ছিল।’’

ওই চিকিৎসকের দাবি, ১২ ঘন্টা পর রক্তক্ষরণ শুরু হয় তরুণীর। বেথুয়াডহরিতে ব্লাড ব্যাঙ্ক না থাকায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পাঠাই। শুনেছি সেখান থেকে কল্যাণীর জেএনএমে পাঠানো হয়েছিল।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘৩৮ বা তার বেশি বয়সে কোনও মহিলা মা হলে এবং তাঁর উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা থাকলে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের কোনও কিছুই করার থাকে না।’’

বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ সজল বিশ্বাস বলেন, “আমাদের কাছে মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি থানা থেকে মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হল, সেটা আমরাও তদন্ত করে দেখব।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “বেথুয়াডহরির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কী ভাবে ওই প্রসুতির মৃত্যু হল, তা তদন্ত করে দেখা হবে।”

তদন্ত শুরু করেছে পুলিশও। শুক্রবার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে মৃতদেহ। হরিপদবাবুর আক্ষেপ, ‘‘আমার দৃঢ় ধারণা, ডাক্তারের ভুলেই এমন হল। তদন্ত হলেই ঠিক জানা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement