ত্রাতা: গোপাল কুণ্ডু
দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চার দিক। রাতদুপুরে পাড়া জুড়ে প্রবল হইচই, কান্নাকাটি, আর্তনাদ। তখনও দমকল এসে পৌঁছয়নি। ঠিক তখনই হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন বছর ছিয়াত্তরের গোপাল কুণ্ডু। সঙ্গে বেশ কয়েক জন লোকজন। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিলেন তাঁরাও। তারপর দমকল এলে সেই কর্মীদের সাহায্য করা, অসুস্থ লোকজনের প্রাথমিক চিকিৎসা, হাসপাতালে পাঠানো— সব কাজেই নেতৃত্ব দিলেন ছিয়াত্তরের সেই যুবক!
শুধু আগুন নয়, সীমান্ত ঘেঁষা চাপড়া এলাকায় মুশকিল আসান তিনিই। কিন্তু এই বয়সে এত দৌড়ঝাঁপ করতে সমস্যা হয় না? হাসতে হাসতে গোপালবাবু বলেন, ‘‘বয়স আবার কী! আসল কথা হল মন। সেটার বয়স বাড়তে দিলে চলবে না।’’ তাই বলে আগুনের সঙ্গে লড়াই?
গোপালবাবু জানাচ্ছেন, উপস্থিত বুদ্ধি আর একটু প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে ওটা কোনও বড় ব্যাপারই নয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ভীষণ ভাবে বেঁচে থাকতে চান। সেটাই তাঁর একমাত্র স্বপ্ন। এপ্রিলের শেষে ৯৭ বছর বয়সে যেমন স্বপ্নপূরণ করেছেন মার্কিন মুলুকের পেনসিলভ্যানিয়ার বাসিন্দা বিল গ্রান। কোথাও আগুন লাগলে দমকলের গাড়িতে বসে সাইরেন বাজাতে বাজাতে তিনি পৌঁছে যাবেন ঘটনাস্থলে। তারপর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আগুন নেভাবেন। সারাটা জীবন ধরে এই স্বপ্নটাই দেখেছিলেন বিল। ৯৭তম জন্মদিনে তাঁর পরিচিতরা দমকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে গাড়িতে বসিয়ে দেন বিলকে। তিনি সাইরেনও বাজালেন। তবে কাছেপিঠে কোথাও আগুন লাগেনি। নাহলে আগুন নেভানোর কাজটিও তিনি করে ফেলতেন।
বিল গ্রানের কথা শুনে উচ্ছ্বসিত গোপালবাবু বলছেন, ‘‘দেখেছেন, স্বপ্নটাই যদি না দেখেন তাহলে সেটা পূরণ হবে কী করে!’’ গোপালবাবুর দলের একজন মৃণালকান্তি বিশ্বাস বলছেন, “এ ভাবেও যে বেঁচে থাকা যায় সেটা ওঁকে কাছ থেকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।’’
চাপড়ার বাসিন্দা গোপালবাবু ব্যবসা করতেন। বছর কয়েক আগে সে সব দায়িত্ব ছেলেদের হাতে তুলে দিয়ে তিনি এখন সকলের মুশকিল আসান হয়ে উঠেছেন। তাঁর বড় ছেলে মৃণাল কুণ্ডু বলছেন, ‘‘সেই ছোট থেকেই দেখছি, কারও কোনও বিপদ আপদ হলেই সবার আগে বাবা ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু এখন তো বয়স হয়েছে। নিষেধ করলেও কারও কথা শোনে না। তাই এখন বাধা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছি।’’ এলাকার লোকজনও
বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস গোপালবাবুর মতো লোক আমাদের এলাকায় আছেন।’’
কতটা বয়স হলে যেন বৃদ্ধ বলা যায়!