অস্মিকা দাস। —নিজস্ব চিত্র।
বিরল জিনঘটিত রোগে আক্রান্ত ছোট্ট অস্মিকা দাস। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি (১)। চিকিৎসার খরচ বিপুল। শিশুকে বাঁচাতে ‘দূত’ হিসাবে এগিয়ে এসেছিলেন নেটাগরিকরা। শুরু হয়েছিল ‘ক্রাউড ফান্ডিং’। তাতেই ১৯ কোটি টাকা মূল্যের ইঞ্জেকশন পেল শিশু। নদিয়ার রানাঘাটের এই শিশুর পাশে নেটাগরিকদের দাঁড়াতে দেখে আশায় বুক বাঁধছেন একই রোগে আক্রান্ত আরও দুই শিশুর পরিবার।
অস্মিকার পরিবার সূত্রে খবর, জিন থেরাপির জন্য প্রয়োজনীয় টাকার বেশির ভাগই এসেছে জন-তহবিল থেকে। সামাজিক মাধ্যমেই চলেছিল প্রচার। এগিয়ে এসেছিল একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বহু মানুষের বিন্দু-বিন্দু ভালবাসাই হয়েছে ‘সিন্ধু’। প্রায় ১১ মাসের চেষ্টাতে উঠে আসে চিকিৎসার খরচ। আরও জানা গিয়েছে, দাম ১৯ কোটি হলেও নির্দিষ্ট দামের থেকে চিছুটা ছাড় দিয়েছিল ইঞ্জেকশন প্রস্তুতকারী সংস্থা। তাতেই মিলেছে সাফল্য।
স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রপি (এসএমএ) একটি জিনগত রোগ। চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্যতম উপায় ইঞ্জেকশন, জোলজেনসমা। বুধবার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক সংযুক্তা দে’র তত্ত্বাবধানে সেই ইঞ্জেকশনই দেওয়া হল অস্মিকাকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, জিন থেরাপি এককালীনই দিতে হয়। তা নেওয়ার পরে আপাতত স্থিতিশীল শিশু। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক বলেন, ‘‘আগে শিশুদের এই ধরনের রোগ চিহ্ণিত করাই যেত না। আস্তে আস্তে তা বেড়েছে। আমরা আরও অস্মিকাকে পাচ্ছি। মূলত তিন ধরনের ওষুধ রয়েছে। এই ওষুধগুলো যখন আমরা বাইরে থেকে আনানো শুরু করেছিলাম তখন ‘বিরল রোগ নীতি’ ছিল না। নতুন নিয়ম হওয়ার পরে কিছু পোর্টালের মাধ্যমে ওরাল মেডিসিন পেয়েছি। সবই ব্যয়বহুল। প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি ফান্ডিংয়ের।’’ তিনি বলেন, ‘‘ভারতে এই ধরণের রোগের ওষুধ তৈরির প্রচেষ্টা একান্ত জরুরি।’’
অস্মিকার বাবা শুভঙ্কর দাস বলেন, ‘‘আমার মেয়ের যখন বয়স মাত্র ছয় তখন রোগটা ধরে পড়ে। ইঞ্জেকশনের জন্য একমাত্র উপায় ছিল ক্রাউড ফান্ডিং। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে নেট প্রভাবী-সহ সবার কাছেই আবেদন জানিয়েছিলাম। সবার আর্শীবাদেই আজ শুভ দিনটা দেখতে পেলাম।’’ নিজের সন্তানের চিকিৎসাতেই সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত নন অস্মিকার বাবা। তাঁর কথায়, ‘‘এরকম বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদেরকে সরকার সাহায্য করলে গরিব পরিবারগুলি উপকৃত হবে।’’
একই রোগে আক্রান্ত বাঁকুড়ার সিমলাপালের অড়রা গ্রামের বাসিন্দা ঈশান হাতি ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সোনারপুরের হৃদিকা দাস। অস্মিকার চিকিৎসার খবর পেতেই হৃদিকা দাসের মা বলেন, ‘‘আমার মেয়েও একই রোগে আক্রান্ত। তাকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল। অস্মিকার বাবাকে দেখে আমরাও লড়াই করার সাহস পাচ্ছি। আমাদের এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা উঠেছে। এককালীন প্রয়োজন মোট ৯ কোটি। ওর বয়স এখন ১৪ মাস। হাতে মাত্র ৬-৭ মাস রয়েছে।