গুলি লাগতেই বাসে লুটিয়ে পড়েন মিঠুন

যে ফোন আসার কথা ছিল রবিবার। কিন্তু সারাদিনের অপেক্ষাই সার। ফোন আর বাজেনি। অথচ বিকেল সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যেই ফোনটা আসে। সেই ভূস্বর্গ কাশ্মীর থেকে সুখদুখের কথাগুলো তরঙ্গে ভর দিয়ে উড়ে আসত নবদ্বীপের অভয় মা তলায় নীলরতন চক্রবর্তীর বাড়িতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০০:২৫
Share:

যে ফোন আসার কথা ছিল রবিবার। কিন্তু সারাদিনের অপেক্ষাই সার। ফোন আর বাজেনি। অথচ বিকেল সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যেই ফোনটা আসে। সেই ভূস্বর্গ কাশ্মীর থেকে সুখদুখের কথাগুলো তরঙ্গে ভর দিয়ে উড়ে আসত নবদ্বীপের অভয় মা তলায় নীলরতন চক্রবর্তীর বাড়িতে।

Advertisement

বাড়ির একমাত্র ছেলে নিগমপ্রিয় চক্রবর্তী গত এগারো বছর ধরে সিআরপিএফে কর্মরত। এখন আছেন কাশ্মীরে। প্রতিদিনই বিকেল বেলায় ফোন করে বাবা, মা, স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কিন্তু স্বর্গে যা গণ্ডগোল তাতে করে বাড়ির একমাত্র ছেলের ফোনটা ঠিক সময়ে না এলে বাবা-মায়ের মন তো কু গাইবেই।

শনিবার বিকেলে ফোন না পেয়ে এ দিক থেকে পাল্টা ফোন করতে শুরু করেন উদ্বিগ্ন বাবা। বেজেই চলে ছেলের ফোন। ও প্রান্ত থেকে কোন সাড়া নেই। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। অজানা আশঙ্কায় সিঁটিয়ে যান মা টুলুরানি দেবী এবং মাত্র দেড় বছরের বিবাহিত স্ত্রী বীণা। কী করবেন বুঝতে না পারেন না।

Advertisement

রাত সাড়ে নটা। শেষ পর্যন্ত বেজে ওঠে ফোন। মোবাইলের স্ক্রিনে চেনা নম্বর। কিন্তু নীলরতনবাবুর তড়িঘড়ি হ্যালোর জবাবে ওপার থেকে উত্তর দেয় অচেনা কণ্ঠ। ‘আমি দেবাশিস পাত্র বলছি, নিগমপ্রিয়র বন্ধু। আমিও ওর সঙ্গেই সিআরপিএফে’র ১৬১ নম্বর কোম্পানিতে আছি।’ ঘাবড়ে যান বয়স্ক নীলরতন বাবু। ‘‘কিন্তু নিগমপ্রিয় কোথায়?’’ উত্তরে ও প্রান্ত পাল্টা প্রশ্ন করে ‘‘সে কি আপনারা কিছু জানেন না? টিভি দেখেন নি?’’ এইটুকু শুনেই হাত পা ঠাণ্ডা মেরে আসে বৃদ্ধ বাবার।

ছেলের বন্ধুর কাছ থেকে ফোন মারফৎ জানতে পারেন বিকেলে অন্যদিন ছেলে মিঠুন যখন কাশ্মীর থেকে বাড়িতে ফোন করে কথা বলে, শনিবার ঠিক সেই সময়েই পাকিস্তানি জঙ্গিদের বুলেটের নিশানা হয়ে লুটিয়ে পড়েছিল বাসের মেঝেতে। ঘটনায় মোট আটজন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন এবং আঠারো জন মারাত্মক জখম হন। তাঁরা শ্রীনগরে সেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার মধ্যে একজন নিগমপ্রিয় ওরফে মিঠুন। গুলি লেগেছে তাঁর হাত এবং কাঁধে।

ঘটনার চারদিন পরেও সেদিনের সন্ধ্যার কথা বলতে গিয়ে কেঁপে উঠছিলেন নবদ্বীপের প্রবীণ রেশন ডিলার নীলরতনবাবু। স্ত্রী এবং বউমার কথা মাথায় রেখে নিজেকে সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে বিষয়টি বাড়িতে সকলকে জানান।

প্রাথমিক ধাক্কা সামলে তিনি বলেন, “মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত যে খবর পেয়েছি, তাতে অপারেশন করে গুলি বের করা হয়েছে।’’ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন মিঠুন এখন বিপন্মুক্ত। তবে এখনও তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন