এক ক্লিকেই রক্ত এল রোগীর কাছে 

মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে পরিচিত বার্তা ‘সুপ্রভাত’ ও ‘শুভরাত্রি’। কিন্তু এখানে তার বদলে আসে, ‘ও পজেটিভ’ বা ‘বি পজেটিভ’। কখনও ‘এবি নেগেটিভ’। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের পরিচিত বার্তা ছেড়ে তারা মেতেছে মানুষের রক্ত সঙ্কট কাটাতে।

Advertisement

নিজস্ব সাংবাদদাতা

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০১:১৭
Share:

এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা না কি সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকে! এমন অভিযোগ নতুন নয়। সেখানেই বন্ধুতার টান থাকে যেমন, তেমনি মুমূর্ষু রোগীর পাশে দাঁড়ানোর দায়বন্ধতাও থাকে! সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর থেকে কয়েক জন রক্তের দালাল গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় পরেই ওই গ্রুপের চাহিদাও বেড়ে গিয়েছে আগের থেকে অনেক বেশি।

Advertisement

মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে পরিচিত বার্তা ‘সুপ্রভাত’ ও ‘শুভরাত্রি’। কিন্তু এখানে তার বদলে আসে, ‘ও পজেটিভ’ বা ‘বি পজেটিভ’। কখনও ‘এবি নেগেটিভ’। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের পরিচিত বার্তা ছেড়ে তারা মেতেছে মানুষের রক্ত সঙ্কট কাটাতে।

বহরমপুর, বেলডাঙা-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এমনই গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি গ্রুপ। এমনই একটি গ্রুপ ‘মানব বন্ধ‌ন-এ ইউনিট অফ ব্লাড ডোনার্স’। তেমনি রয়েছে ‘ব্লাড ডোনার মুর্শিদাবাদ ইয়ং স্টার’-এর দেড়শো জন সদস্য, যারা নিয়মিত রক্ত দিয়ে থাকে। ফেসবুকে পেজে রয়েছে প্রায় সাড়ে চারশো জন। ওই সদস্যদের অধিকাংশ সদস্য আবার জিয়াগঞ্জ এলাকার। সম্প্রতি এমনই এক গ্রুপের রক্ত সংক্রান্ত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তিনি জেলার প্রতিটা এলাকায় এই ধরনের গ্রুপ গঠনের আহ্ববান করেন। তাতে রক্তের সমস্যা মিটবে।

Advertisement

ওই সমস্ত গ্রুপে ফোন বা মেসেজ করলেই রক্তদাতাকে ব্লাড ব্যঙ্কে পাঠিয়ে দেয় তারা। কিন্তু হাতে সমান গ্রুপের ডোনার না থাকলে একটু সময় লাগে। কিন্তু রক্ত মেলে জেলার যে কোন প্রন্তের মানুষের। সম্প্রতি পেয়েছেন জলঙ্গীর সাহেব নগরের বাসিন্দা আ‌নারুল শেখ। তার এবি নেবেটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন ছিল। তাকে এই গ্রুপের মাধ্যমে জানতে পেরে রক্ত দিয়েছেন বেলডাঙার ওসি জামালুদ্দিন মণ্ডল। এমনই এক গ্রুপের কর্ণধার তারিফ হোসেন বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের পরেপরেই গ্রামের পুয়াজ আলির স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় বি পজেটিভ গ্রুপের রক্তের খুব প্রয়োজন হয়। তিনি আমাকে জানায়। আমি আমার ফেসবুকের পেজে তা পোষ্ট করি। সেখান থেকে বহরমপুরের বাসিন্দা নিমার্ল্য সাহা রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। এর থেকে মাথায় আসে এই গ্রুপ তৈরির কথা। তারপর সেটা থেকে আজ তিনটে গ্রুপ। মহিলাদের জন্যও আলাদা গ্রুপ করা হয়েছে।

প্রতিটি পরিবারের রক্তের প্রয়োজনীয়তা দূর করতে ও রক্তদানে আগ্রহী করতে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন। শিবিরে প্রধান অতিথি জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। আমরা তাঁকে সভাপতি হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। উনি তা গ্রহন করেছেন।’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেলডাঙা থানার ওসি জামালউদ্দিন মণ্ডল।

রবিবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার প্রকাশ্য সভায় বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস আগে জেলায় রক্ত সংকট এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল যে পুলিশ প্রশাসন কে এলাকায় এলাকায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করতে হয়। এই জেলায় সরকারি হিসাবে লোক সংখ্যা ৭১ লক্ষ গত ২০১১ সালের আদুমসুমারি হিসাবে। সেটা এখন বেড়ে হয়তো প্রায় ৯০ লক্ষে পৌঁছবে। জেলার প্রতিটা এলাকায় এই ধরনের গ্রুপ তৈরি করুন। আমরা পুলিশ প্রশাসন পাশে থাকবো। যাতে কোন মানুষকে রক্তের অভাবে মরতে না হয়।’’ এতো বড় জেলায় কেন রক্তের সমস্যা ? জেলা পুলিশ সুপারের কথায়, ‘‘আমাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব। তার জন্য রক্তের অভাব। কিন্তু এই মানব বন্ধনের মত গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন শুধু বেলডাঙায় নয় সারা জেলায় ছড়িয়ে দিন। সারা জেলায় ছড়িয়ে দিন আপনাদের মাধ্যমে। তাতে অনেক মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচান সম্ভব হবে।’’

এই কাজ বর্তমানেও চলছে। সম্প্রতি রানীনগরের ওসি সমিত তালুকদারও এই গ্রুপের ডাকে রক্ত দিয়ে গিয়েছেন বহরমপুরে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে এসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন