আজকালকার ছেলেদের সব পেটের রোগ, চুল দু’একটা পাকলেও ওরা একেবারে কচি

বয়স ভাঁড়ানো রুখতে ফুটবলে আধার

এই সে দিন ডোমকলের ঘটনা। দর্শকে ঠাসা ময়দান। কিন্তু খেলা শুরু হচ্ছে না। মাঠের মধ্যে হই-চই করছেন ক্লাব কর্তারা। এক ক্লাবের কর্তারা বলছেন, ‘‘আমাদের ছেলেদের সবে গোঁফ দাড়ি গজিয়েছে, আর ওদের দেখুন, চুল পেকে গিয়েছে।’’

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজাউদ্দিন

নবদ্বীপ ও ডোমকল শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

পদক্ষেপ: এ রকমই অ্যালবাম তৈরি করা হবে।

ম্যাচ শুরুর হওয়ার আগেই হইচই। নিয়মমাফিক দু’দলের খেলোয়াড়দের নাম মিলিয়ে নথিপত্র দেখতে গিয়ে সন্দেহটা হয়েছিল রেফারির। একজন খেলোয়াড়কে করতেই দেখা গেল যে তাঁর রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সঙ্গে নাম-ধাম কিছুই যে মিলছে না। চেপে ধরতেই স্পষ্ট হল, তিনি ওই ক্লাবের নন, অন্য জায়গার খেলোয়াড়। নাম ভাঁড়িয়ে মাঠে নেমেছিল। ঘটনাটি নবদ্বীপের।

Advertisement

শুধু নবদ্বীপ বা নদিয়া, এমন ঘটনা ঘটছে মুর্শিদাবাদেও। সম্প্রতি দুই জেলাতেই শুরু হয়েছে পেশাদার লিগ এবং নকআউট টুর্নামেন্ট। তার বাইরেও বিভিন্ন সংস্থা বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে। সেখানেও সমস্যা সেই একই।

এই সে দিন ডোমকলের ঘটনা। দর্শকে ঠাসা ময়দান। কিন্তু খেলা শুরু হচ্ছে না। মাঠের মধ্যে হই-চই করছেন ক্লাব কর্তারা। এক ক্লাবের কর্তারা বলছেন, ‘‘আমাদের ছেলেদের সবে গোঁফ দাড়ি গজিয়েছে, আর ওদের দেখুন, চুল পেকে গিয়েছে।’’ উল্টো দিক থেকে পাল্টা যুক্তি, ‘‘আজকালকার ছেলেদের সব পেটের রোগ। চুল দু’-একটা পাকলেও ওরা একেবারে কচি।’’ শেষ তক তর্ক হাতাহাতিতেও গড়ায়।

Advertisement

সেই সমস্যা মেটাতে এ বার খোলায়াড়দের আধার কার্ড আবশ্যিক করছে দুই জেলার ক্রীড়া সংস্থা। বয়স ভিত্তিক খেলায় নাম ভাঁড়িয়ে খেলোয়াড় নামানো ময়দানের বহু পুরনো অসুখ। প্রতিবাদ, ক্লাবে-ক্লাবে অশান্তি, খেলা স্থগিত হয়ে যাওয়ার ঘটনা আকছার ঘটে। অনেক সময় খেলাই বানচাল হয়ে যায়।

সম্প্রতি নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার বৈঠকে বিষয়টি ওঠে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বয়স ভিত্তিক খেলায় আধার কার্ড আবশ্যিক। নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, আধার কার্ডে বয়স ও ছবি থাকার কারনে নাম ভাঁড়িয়ে মাঠে নামার প্রবণতা বন্ধ হবে।

এতদিন খেলোয়াড়দের নাম নথিভুক্ত করতে হলে পুরসভা কিংবা পঞ্চায়েতের বার্থ সার্টিফিকেট প্রমাণপত্র হিসাবে দাখিল করতে হত সংশ্লিষ্ট ক্রীড়াসংস্থার দপ্তরে। বয়স ভিত্তিক লিগের খেলায় সাবজুনিয়র বিভাগের খেলোয়াড়দের তার সঙ্গে দিতে হত বাবা কিংবা মা কোনও এক জনের ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র। রেজিস্ট্রেশনের সময় একজন খেলোয়াড় নিজের সম্পর্কে যে তথ্য দিতেন, সেটাই চূড়ান্ত বলে ধরে নিতে হত।

নদিয়া জেলা ক্রীড়াসংস্থার সহ সভাপতি গৌতম বিশ্বাসের মতে, জন্মের প্রমানপত্রের সঙ্গে কোনও ছবি থাকে না। তাই খেলোয়াড়ের ছবি বদলে কারচুপি করার সুবিধা ছিল। অনেকেই এই সুযোগের অপব্যবহার করতেন। এবার ছবি বদলে নাম ভাঁড়ানোর সুযোগ কমে যাবে বলেই মনে হয়।

কিন্তু যাঁদের এখনও আধার কার্ড নেই, তাঁরা আধার কার্ড করার জন্য আবেদন করা হয়েছে এমন নথি জমা দিয়েও কাজ চালাতে পারবেন।

ডোমকল ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ধীমান দাস বলেন, ‘‘দুর্নীতির ক্ষেত্রে যে কোনও আধুনিক প্রযুক্তি প্রথমে ভাল কাজ দেয়। ফলে আধার দিয়ে খেলয়াড়দের তালিকা তৈরী হলে কিছুটা স্বচ্ছতা যে আসবে সেটা ঠিক। অনেক খেলয়াড়ই আধার কার্ড নেই বলে দাবি করতে পারে। সরকার যেখানে অনেক ক্ষেত্রে আধার বাধ্যতা মূলক করতে পারেনি।’’ তিনি জানান, আধার কার্ড
আসল না নকল, তা পরীক্ষা করার মতো কোনও পরিকাঠামোই তাঁদের নেই।

নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী জানান, সেই সঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থা এ বছর থেকে খেলোয়াড়দের ছবি, নাম, ঠিকানা, বয়স যাবতীয় তথ্য সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রতিটি ক্লাবকে। ‘প্লেয়ারস অ্যালবাম’ নামে ওই তালিকায় আধার কার্ডের নম্বরও থাকছে। ফলে যদি কোনও খেলোয়াড়কে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তা হলে আধার নম্বর ধরে তথ্য মিলিয়ে দেখার সুযোগ থাকছে।

মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক তরুণ দত্ত বলেন, ‘‘ক্লাব কর্তাদের মানসিকতার বদল না হলে বয়স ভাঁড়ানো রোগ পুরোপুরি সম্ভব নয়। তবে আমাদের জেলায় খেলোয়াড়দের নাম নথিভুক্ত করার সময় আধার কার্ড বাধ্যতা মূলক করেছি। এখন দেখা যাক কতটা সুফল মেলে আধারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন