কঠিন সময়, তবু বহিষ্কার সিপিএমে

পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে নদিয়া জেলায় এমন ৩২ জন পার্টি সদস্যকে বহিষ্কার করেছে সিপিএম। এর মধ্যে বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার। এবং এঁরা সকলেই দলের কোনও না কোনও শাখা কমিটির সদস্য। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া দু’জন নেতাকে ডেকে সতর্কও করা হয়েছে। 

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার, কারও বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির হয়ে কাজ করার। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতিতে সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে, কারও বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার।

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে নদিয়া জেলায় এমন ৩২ জন পার্টি সদস্যকে বহিষ্কার করেছে সিপিএম। এর মধ্যে বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার। এবং এঁরা সকলেই দলের কোনও না কোনও শাখা কমিটির সদস্য। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া দু’জন নেতাকে ডেকে সতর্কও করা হয়েছে।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম ও বিজেপির যৌথ দেওয়াল লিখন দেখা গিয়েছিল। জেলা নেতারা যা-ই বলুন, বুথ স্তরে তৃণমূলকে হারাতে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতার পথ নিয়েছিলেন সিপিএমের বেশি কিছু স্থানীয় স্তরের নেতা। বিশেষ করে করিমপুরে এমন ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। অনেক এলাকায় দলের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও বিজেপির হয়ে প্রকাশ্যে কাজ করতে দেখা গিয়েছিল সিপিএম কর্মীদের। তত্ত্বগত ভাবে যে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ বলে মনে করে সিপিএম, তাদের সঙ্গেই এই সন্ধি অস্বস্তিতে ফেলে দেয় জেলা নেতৃত্বকে। এই নিয়ে দলের ভিতরেই সমালোচনার মুখে পড়তে

Advertisement

হয়েছিল তাঁদের।

সিপিএম নেতৃত্বের একটা অংশের মতে, গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় বিজেপির অপেক্ষাকৃত ভাল ফলের পিছনে তাঁদের দলের একটা অংশের সক্রিয় ভূমিকা আছে। দল সূত্রের খবর, ভোটের সময় থেকেই জেলা নেতৃত্ব এই সব ‘দলবিরোধী’ পার্টি সদস্যদের চিহ্নিত করতে থাকেন। এঁদের অনেকের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে থেকেই অভিযোগ এসেছিলেন। সেই সব অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সামসুল ইসলাম মোল্লার নেতৃত্বে পাঁচ জনের ‘অভিযোগ ও শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি’ তদন্ত শুরু করে। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৩২ জনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

সিপিএম সূত্রের খবর, জেলায় শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে এই ধরনের অভিযোগ এসেছে। অনেকের বিরুদ্ধে এখনও তদন্ত চালাচ্ছে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। বহিষ্কৃতদের মধ্যে এমন দু’জন আছেন যাঁদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গ নিয়ে দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার অভিযোগ ছিল। দলের এক জেলা নেতার দাবি, কালীগঞ্জের এমন দু’জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে যাঁরা একশো দিনের কাজ না করলেও তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত টাকা ঢুকত বলে অভিযোগ। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

একেবারে বহি‌ষ্কার করা না হলেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ থাকায় ডেকে সতর্ক করা হয়েছে জেলা কমিটির এক সদস্য এবং এরিয়া কমিটির এক সম্পাদককে। দল যখন ভাঙনের মধ্য দিয়ে চলছে, যেখানে দলের নেতা-কর্মীরা সরাসরি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, সেই পরিস্থিতিতেও নেতৃত্ব এ রকম কঠিন অবস্থান নেওয়ায় খুশি মাটি কামড়ে পড়ে থাকা নিচুতলার বহু কর্মীই। দেওয়ালে যখন পিঠ ঠেকেই গিয়েছে, এই সাহসিকতার পরিচয় দেওয়াটা জরুরি ছিল বলে তাঁরা

মনে করছেন।

জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, “দল ছোট হোক, ক্ষতি নেই। কিন্তু মতাদর্শহীন বেনোজল আমরা আর রাখব না বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা দলে থাকবেন, তাঁরা যেন সর্বশক্তি দিয়ে রাস্তায় নামেন।” জেলা সম্পাদক সুমিত দে-ও বলছেন, “রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভাবে বিচ্যুত হয়েছেন, এমন কাউকেই আর আমরা দলে রাখব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন