ঘরে-ফেরা: বাবা-মায়ের সঙ্গে অমল। ভরতপুরে। নিজস্ব চিত্র
বছর সাতেক আগের ঘটনা। চণ্ডীগড়ে কাজে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল বছর চোদ্দোর কিশোর সৈয়দ আসিরুল ইসলাম ওরফে অমল। ভরতপুরের বাসিন্দা। বাড়ির লোকজন অমলের খোঁজে জেলা পুলিশ ও সিআইডির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। খোঁজ মেলেনি। এক সময় ভাবতে শুরু করেছিলেন, অমল আর হয়ত কোনওদিনই ঘরমুখো হবে না। কিন্তু সে সব আশঙ্কা ভুল প্রমান করে ঘরে ফিরেছে অমল। বুধবার দুপুরে তার ঘরে ফেরাকে ঘিরে সৈয়দ বাড়িতে উৎসবের মেজাজ।
২০০৯ সালে বাড়ির লোকজনের নিষেধ উড়িয়ে এক জামাইবাবুর সঙ্গে অমল চণ্ডীগড়ে গেঞ্জি-কারখানায় কাজে যায়। বাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও ছিল। কিন্তু আচমকা ছেলের সঙ্গে সংযোগ ছিন্ন হয় সৈয়দ পরিবারের। ছেলেকে ফিরে পেতে পুলিশ-সিআইডির দ্বারস্থ হন অমলের পরিবার। নিজেরাও বছর দুয়েক টানা ঘুরে বেড়িয়েছেন চণ্ডীগড় ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে। কিন্তু খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। পরিবারের লোকজন ভাবতে শুরু করেছিলেন, আর কোনও দিন হয়তো ফিরবে না বাড়ির ছোট ছেলে।
কিন্তু আচমকা দিন পনেরো আগে ডাক আসে ভরতপুর থানা থেকে। পুলিশ জানায়, অমল রয়েছে চেন্নাইয়ে। একটি মানসিক হাসপাতালে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। বাড়ির লোকজন গিয়ে অমলকে নিয়ে আসে।
চেন্নাইয়ে যে অমল রয়েছে, তা কী ভাবে জানল পুলিশ? মাসখানেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পুলিশের আধিকারিক বিপুল বিশ্বাস চেন্নাইয়ে ওই হাসপাতালে যান। তাঁর এক আত্মীয়ের চিকিৎসা করাতে। সেখানে তাঁর সঙ্গে বিপুলের আলাপ। বিপুল তাঁকে নিজের বাড়ির ঠিকানা জানায়। বলেছিল, ‘‘এখানে বাংলা কেউ বোঝে না। তাই কাউকে বাড়ির কথা জানাতে পারিনি।’’ আর কী ভাবে সে চেন্নাইয়ে এসেছে তা কিছুই জানাতে পারেনি সে। ফিরে এসে বিপুলবাবু মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানান। অমলের মা মুরায়া ইসলাম বলেন, “সবাই বলত আসারুলকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। আমার মন বলত ছেলে একদিন বাড়ি ফিরবেই। আমার মনের ডাকটাই ঠিক হলো।’’