তদন্তে ফরেন্সিক দল। মঙ্গলবার।
যতটা গর্জেছিল, তত বর্ষাল না। গোটা একটা দিন নাকানিচোবানি খেয়ে শেষে হাঁফ ছাড়ল পুলিশ।
যে বিস্ফোরণে ভেঙে পড়েছিল একটা চারতলা বাড়ির সমস্ত জানলার কাচ, ফাটল ধরে পাশের বাড়িতে, তার পিছনে বোমা-গোছের কিছুর হদিস মিলল না। পাওয়া গেল না খাগড়াগড় ধাঁচের জঙ্গি নাশকতার ব্লু-প্রিন্টও।
তার বদলে রান্নার গ্যাসে আগুন লেগে যাওয়ার তত্ত্বই ক্রমশ জোরালো হয়েছে। সোমবার বিকেলে কৃষ্ণনগর সদর মোড়ে ওই বিস্ফোরণের পরেই জখম গৌতম দাস দাবি করেছিলেন, বাড়ির বেসমেন্টে তিনি বিড়ি ধরাবেন বলে লাইটার জ্বালায় বিস্ফোরণ হয়। তখন তা তেমন বিশ্বাস্য মনে না করলেও পরে পুলিশ ও গোয়েন্দারা তা মেনে নিচ্ছেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে গৌতমকে এনআরএসে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে তদন্তে আসেন সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা। বেসমেন্টের ঘর আর সিঁড়ি পরীক্ষা করে তাঁরা জানান, কোনও বিস্ফোরক থেকে এই ঘটনা ঘটেনি। পরে তাঁদের উপস্থিতিতে ঘর পরীক্ষা করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাও। কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেন তাঁরা। পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দেবাশিস সাহা বলেন, “কোনও বিস্ফোরকের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার পরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
বম্ব স্কোয়াড এবং ফরেন্সিকের একাংশের ব্যাখ্যা, ওই ঘরে রাখা সিলিন্ডারের গ্যাস বেরিয়ে গিয়েছিল। গৌতম সকালেই ওই সিলিন্ডার এনে রেখেছিলেন। দু’টি দলই সিলিন্ডারটি পরীক্ষা করে দেখে, তাতে গ্যাস ছিল না। ঘরের দরজা-জানলাও বন্ধ ছিল। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, পুরো গ্যাস বদ্ধ ঘরে জমে ছিল। গৌতম লাইটার জ্বালাতেই তা নিমেষে জ্বলে উঠেছে। বদ্ধ ঘরে তা কার্যত বিস্ফোরণের চেহারা নিয়েছে। তার অভিঘাতে টলে উঠেছে বাড়ি, ভেঙেছে কাচ।
পুলিশ সোমবার ওই বিস্ফোরণের পরে চাপে পড়ে গিয়েছিল। পুলিশ সুপার চলে এসেছিলেন ঘটনাস্থলে। গৌতমের সঙ্গে কাজ করেন এমন কয়েক জন রাজমিস্ত্রি এবং বর্তমানে যে বহুতল তৈরির কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন, তার ঠিকাদারদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জেরা করা হয় বাড়ির মালিক অর্ণব চট্টোপাধ্যায়কে। নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা রিপোর্ট জমা দিলে তবেই বিস্ফোরণের কারণ পরিষ্কার হবে।”