ধান কিনছে না সরকার, পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ চাষিদের

সহায়ক মূল্যে ধান কেনার বিষয়ে সরকারের ঘোষণা যে কথার কথা, শুক্রবার অবস্থান বিক্ষোভ করে নবগ্রামের কয়েক হাজার কৃষক তা প্রমাণ করে দিলেন। অভিযোগ, বোরো মরসুমে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত নবগ্রাম ব্লকে কোনও শিবিরের আয়োজন করা হয়নি। ফলে এলাকার চাষিরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০১:০৫
Share:

দাম না পেয়ে ধান পুড়িয়ে বিক্ষোভ চাষিদের। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

সহায়ক মূল্যে ধান কেনার বিষয়ে সরকারের ঘোষণা যে কথার কথা, শুক্রবার অবস্থান বিক্ষোভ করে নবগ্রামের কয়েক হাজার কৃষক তা প্রমাণ করে দিলেন।

Advertisement

অভিযোগ, বোরো মরসুমে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত নবগ্রাম ব্লকে কোনও শিবিরের আয়োজন করা হয়নি। ফলে এলাকার চাষিরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অবিলম্বে ওই শিবির আয়োজনের দাবিতে নবগ্রাম থানা কৃষক সমিতি নবগ্রাম বাসস্ট্যান্ড মোড়, পাঁচগ্রাম মোড় ও পলসণ্ডা মোড়ে অবস্থান করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। ওই অবরোধের জেরে এ দিন দু’ঘন্টা বহরমপুর-খড়গ্রাম রাজ্য সড়ক ও পলসণ্ডা মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

নবগ্রাম থানা কৃষক সমিতির সম্পাদক তথা নবগ্রামের বিধায়ক সিপিএমের কানাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান কেনার কথা ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত নবগ্রাম ব্লকে কোনও শিবিরের আয়োজন করা হয়নি। ফলে এলাকার চাষিরা কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।’’ ওই ক্ষোভ থেকেই তাঁরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। ওই বিক্ষোভে এলাকার কয়েক হাজার কৃষকও যোগ দিয়েছিলেন।

Advertisement

স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, খোলা বাজারে বোরো ধানের দর কুইন্টাল প্রতি ৮০০-৮৫০ টাকা। এলাকার বিভিন্ন চাষির ঘরে এখনও আমন ধান মজুত রয়েছে। খোলা বাজারে ওই ধানের সঠিক দর না পেয়ে চাষিরা বাধ্য হয়ে তা ঘরে মজুত রেখেছেন। এখন বোরো ধানের দর না পেলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন তাঁরা। কানাইবাবু জানান, বাম আমলে সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে চাষিদের কাছ থেকে সরকার ধান কিনত। কিন্তু তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা ওই ভাবে ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান কেনার জন্য প্রশাসন শিবিরের আয়োজন না করার ফলে চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

নবগ্রাম ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে নারায়ণপুর পঞ্চায়েত এলাকায় তিনটে চালকল রয়েছে। ওই চালকল কর্তৃপক্ষ অনেক সময়ে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে থাকে। সেক্ষেত্রে ওই চালকল মালিকদের কাছে ধান বিক্রি করেন নারায়ণপুর ও লাগোয়া শিবপুর পঞ্চায়েতের চাষিরা। কিন্তু বাকি ৮টি পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা সহায়ক মূল্যের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। এলাকার এক চাষি জানান, আগের তুলনায় বিদ্যুতের মাশুল বেড়েছে, জমিতে জল দেওয়ার খরচ, সারের দাম, মজুরি বেড়েছে। সব দিক থেকে অস্বাভাবিক হারে খরচ বাড়লেও সেই তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।

তবে নবগ্রামের অর্থনীতি বিশেষ করে ধান চাষের উপরেই নির্ভরশীল। কিন্তু বন্যা কবলিত এলাকা হওয়ায় হজবিবিডাঙা, রসুলপুর, পাঁচগ্রাম এবং শিবপুর-গুড়োপাশলা-অমৃতকুণ্ড পঞ্চায়েত এলাকার অংশ বিশেষে আমন ধানের চাষ হয় না। জলে ডুবে যায়। ঝুঁকি নিয়ে এলাকার চাষিরা আমন ধান চাষ করা থেকে বিরত রাখেন। তারা সকলেই নির্ভর করেন বোরো ধানের চাষের উপরে।

এখন যদি সেই বোরো ধানের সঠিক মূল্য থেকে এলাকার চাষিরা বঞ্চিত থাকেন, তাহলে এলাকার অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। ফলে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে এ দিন নবগ্রাম মোড়ে বিডিও সায়ন দাশগুপ্ত উপস্থিত হয়ে প্রশাসনিক স্তরে পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণাও করেন।সরকার কুইন্টাল প্রতি ১৩৬০ টাকা দরে ধান কেনার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে বোরো ধান কেনার জন্য নবগ্রাম ব্লকে এখনও কোনও শিবিরের আয়োজন হয়নি। কিন্তু কেন?

খাদ্য দফতরের জেলা আধিকারিক দেবমাল্য বসু অবশ্য তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘বোরো ধান কেনার জন্য জেলার বিভিন্ন ব্লকে শিবির হলেও নবগ্রামে এখনও কোনও শিবির হয়নি। তবে প্রশাসন এর আগে শিবির করে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি আমন ধান কিনেছে।’’

চাষিদের এ দিনের আন্দোলনের জেরে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী সোমবার থেকে নবগ্রামে বেশ কয়েকটি শিবির করে সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন