বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কৃষি দফতরের দ্বন্দ্ব চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। এ বার কৃষি দফতরের পাঠানো চিঠি উপাচার্যের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসতে হল পুলিশকে।
শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ঘটনার পরে জটিলতা আরও বাড়ল বলেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাংশ। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ধরণীধর পাত্রের সঙ্গে কৃষি দফতরের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। গত এক বছরের মধ্যে উপাচার্যকে বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক বার কড়া চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্যের কৃষি দফতর।
শুক্রবারেও নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে একটি চিঠি পাঠায় কৃষি দফতর। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকায় সেই চিঠি উপাচার্যের কাছে পৌঁছয়নি। শেষতক, স্থানীয় হরিণঘাটা থানার পুলিশের মাধ্যমে সেই চিঠি উপাচার্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এমন ঘটনায় অবাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাংশ। উপাচার্য ধরণীধর পাত্র অবশ্য পুলিশের মাধ্যমি চিঠি পাওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ওই চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘কৃষি দফতরের পাঠানো চিঠি পেয়েছি। নিয়োগ যা হচ্ছে তা নিয়ম মেনেই।’’
কেন কৃষি দফতরকে নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে চিঠি পাঠাতে হল?
বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা চারটি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য শনিবার একটি ইন্টারভিউয়ের বন্দোবস্ত করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় কৃষি সচিব এম চক্রবর্তী চিঠি পাঠিয়ে জানান, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলিতে নিয়োগ জরুরি। কিন্তু উপাচার্যকে আইসিএআর আটারি ও কৃষি দফতরের এক জন প্রতিনিধিকে ইন্টারভিউ বোর্ডে রাখতে হবে। অভিযোগ, সেই নির্দেশ না মেনে শনিবার উপাচার্য ইন্টারভিউ নিয়েছেন। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দেশ অমান্য করে এ ভাবে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া চালিয়ে গেলে সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।’’
বিসিকেভির অধীনে রাজ্যের একাধিক কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র রয়েছে। ওই কেন্দ্রগুলির কর্মচারীদের বেতন কেন্দ্রীয় সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিক্যালচার রিসার্চ (আইসিএআর) দেয়। কিন্তু নিয়োগের দায়িত্ব বিসিকেভির। গত বছরের মাঝামাঝি নদিয়ার গয়েশপুর, হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে ২৭টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। দ্বন্দ্বের সূত্রপাত তখন থেকেই।
অভিযোগ, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলির নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি পদ বরাদ্দ ছিল প্রাণিবিজ্ঞানের জন্য। কিন্তু সেই পদগুলি মৃত্তিকাবিজ্ঞানে রূপান্তরিত করেন উপাচার্য। ঘটনার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র কৃষি দফতরে অভিযোগ জানান। আইসিএআর-আটারির প্রধান বিজ্ঞানী ফিরোজ রহমান উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে এর বিরোধিতা করেন।
৩০ নভেম্বর কৃষি দফতর উপাচার্যকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের নির্দেশ দেয়। ১ ডিসেম্বরের সেই ইন্টারভিউ বাতিল হয়ে যায়। এ বছর মার্চের ২০ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দেন, ২৪ মার্চ ইন্টারভিউ হবে। বিষয়টি নজরে আসে কৃষি দফতরের।
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আটারির ভূমিকা থাকে। কিন্তু এর আগে বিসিকেভি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলিতে যত নিয়োগ করেছে, সেক্ষেত্রে ইন্টারভিউ বোর্ডে দফতর বা আটারির প্রতিনিধি ছিলেন না। যদিও উপাচার্যের দাবি, ‘‘এই বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়।’’