অ্যাম্বুল্যান্স থেকে ওষুধ— ‘আঁধার কারবারে’ প্রায় দশভূজা হয়ে ওঠা অমর রায়ের প্রতিপত্তির উঠোনে যে ক্রমেই আলো পড়ে আসছে, পুজোর পর থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে পড়ছিল।
মরিয়া অমর তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে, একদা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে পুরনো ঘনিষ্ঠতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেছিলেন।
কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সে গুড়ে বালি!
তৃণমূলের অন্দরের খবর, রাজ্য সভার সাংসদ, ওই নেতা জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে অমরের ‘ছায়া’ হয়ে ওঠা আর সম্ভব নয়।
বিকেলটা তাই দ্রুত ঢেকেছিল সান্ধ্য-আঁধারে।
সিন্ডিকেট থেকে জাল ওষুধের ব্যবসা, বাধা দিলেই কল্যাণীর সরকারি চিকিৎসকদের মারধর শুধু নয়, সুপারের ব্যাক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে যে অমর বুঝিয়ে দিতেন— কল্যাণী মুলুকে তিনিই শেষ কথা, সেই কাউন্সিলরের মাথার উপর থেকে দলের ছায়া সরতেই বেআব্রু হয়ে পড়েছিল তার দাপট।
কিন্তু তাঁর এই প্রতিপত্তির শুরুটা কোথায়?
কল্যাণীর এ-টু মার্কেটে এক সময় আলু-পেঁয়াজ বিক্রি করতেন অমর রায়। ২০০৯’এর লোকসভা ভোটের সময়েই বাজারের আলু বিক্রেতা অমর সাত বছরে উঠে এসেছিলেন এই জায়গায়।
বিবেকানন্দ পল্লির অমরের মেন্টর ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজেন হালদার। দলের এক নেতা জানান, ২০০৮ থেকেই সিপিএমের শক্তিক্ষয় শুরু হয় কল্যাণীতে। ২০০৯ সালে বনগাঁ লোকসভা আসনটি তৃণমূল জেতে। কল্যাণী এই লোকসভা এলাকায়। সেই সময় জেএনএম হাসপাতালের বাইরে ছোটখাট ব্যবসা শুরু করেন অমর। বাম আমলেও হাসপাতালে কংগ্রেসের কয়েকজন শ্রমিক নেতার দাপট ছিল। তাঁদের হাত ধরে মূলত হাসপাতালে নতুন আয়া কাজে ঢুকত। তাঁদের সঙ্গে বনিবনা করে দু'’একজন করে আয়া হাসপাতালে ঢোকাতে শুরু করেন অমর। কোনও দায়িত্ব না পেলেও নিজের নামে তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের লেটার হেডের ছাপিয়ে আয়া নিয়োগ করতে শুরু করে। আয়াদের কাছ থেকে প্রথমে ইউনিয়নের চাঁদার নামে টাকা নেওয়া শুরু হয়। তার আয়ের পথ খুলে দিয়েছিল এই আয়া-কারবারই।
হাসপাতালের এক কর্মী জানান, এই সময় অমর অপারেশনে নামান নিজের চার ছেলে বাবু, নাটু, হনা এবং পিকাকে। মাঝে মধ্যেই হাসপাতালের নির্মাণ সামগ্রী চুরি হতে শুরু করে। ঠিকাদারেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের লক্ষ লক্ষ টাকার জিনিস চুরি যাচ্ছে। অভিযোগ ওঠে অমরের চার ছেলের বিরুদ্ধে। পাল্টা হুমকি দিতে শুরু করে অমররের সাঙ্গোপাঙ্গরা। ক্রমে এলাকার দখলদারিতে নেমে পড়ে তারা।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আয়াদের উপর নজরদারির দায়িত্ব দিয়েছিল নিজের এলাকার এক আয়াকে। তার হাত দিয়েই শুরু হয় তোলাবাজি। অমরের কল্যাণে ওই মহিলারও দাপট বাড়তে থাকে। তার কথাতেই যে কোনও আয়ার কাজ চলে যাওয়া ছিল কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। আবার তেমন তেমন টাকা খরচ করতে পারলে আয়ার কাজও জুটে যেত অনায়াসে।
আর এখন?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘দেখা যাক, কারণ অমরের জায়গায় আবার নতুন কেউ না উঠে আসে, সেটাই ভয়ের!’’
(শেষ)
ধৃত অমর-পুত্র
খুনের চেষ্টার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ধাওয়া করা পুলিশ এড়াতে ক্রমাগত ঠাঁই বদল করছিল সে। শেষ পর্যন্ত এক মহিলার সূত্র ধরেই ফাঁদে পা দিল কল্যাণীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমর রায়ের ছেলে বাপি। শুক্রবার রাতে, বর্ধমানের জামালপুর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, বাপি গোপনে ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। ওই মহিলার ফোনে আড়ি পেতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বাপির অবস্থান। জামালপুর থেকে তাকে ধরতে তাই বিশেষ বেগ পেতে হয়নি।