গত দু’দিনে যা দেখা গিয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল তৃতীয় দিনেও। এবং সেই সঙ্গে এটাও কার্যত স্পষ্ট হয়ে গেল যে, দ্বিতীয় পর্বে সব আসামিরাই এক সুরে কথা বলছেন। যার মূল সুরটা হল সমস্ত বিরুদ্ধ সাক্ষ্য ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করে অপরাধ অস্বীকার করা।
ঘুঘড়াগাছির অপর্ণা বাগকে খুনের মামলায় যে ১১ জনকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল কৃষ্ণনগর আদালত, তাঁরা ফের একটা সুযোগ পেয়েছেন সাক্ষ্য সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য পেশ করার। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩১৩ ধারা মোতাবেক তাঁদের এই সুযোগ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ওই ধারায় বলা রয়েছে, রায়দানের আগে সাক্ষীদের বক্তব্য অভিযুক্তকে বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে সে ব্যাপারে তাঁর মত জানতে চাইবেন বিচারক। সেই প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে উচ্চ আদালত ফের তা সম্পন্ন করতে বলতে পারে। এ ক্ষেত্রেও সেই ঘটনাই ঘটেছে।
শুক্রবার তিন আসামিকে সাক্ষ্য সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য জানানোর সুযোগ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (তৃতীয়) মধুমিতা রায়। ওই তিন জন— জয়দেব ঘোষ, রাজকুমার ঘোষ ও নেপাল ঘোষকে একে-একে কাঠগড়ায় ডেকে ৪১ জন সাক্ষীর বয়ান শোনানো হয়। তিন জনই দাবি করেন, তাঁরা নির্দোষ। পুলিশ তদন্ত না করেই তাঁদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
প্রথম দিন, বুধবার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লঙ্কেশ্বর ঘোষ ওরফে লঙ্কা এবং পলাশ ঘোষও ঠিক একই দাবি করেছিলেন। বৃহস্পতিবার পরেশ ঘোষ, ঝন্টু ঘোষ ও বাসুদেব ঘোষ নামে তিন আসামিও দাবি করেন, তাঁরা নিরপরাধ।
এক ধাপ এগিয়ে রাজকুমার ঘোষ এ দিন দাবি করেনস, এক পাড়ায় বাড়ি হওয়ায় লঙ্কেশ্বরকে সে চিনত বটে, কিন্তু তাঁর সঙ্গে কোনও রকম পরিচয় ছিল না। জেলে গিয়ে তাঁদের দু’জনের পরিচয় হয়েছে। রাজকুমার জানান, বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র চালাতে গিয়ে ফিতেয় জড়িয়ে তাঁর ডান হাত কেটে গিয়েছিল। সেই কারণে তাঁর পক্ষে বন্দুক বাগিয়ে গুলি চালানো সম্ভব নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
২০১৪-এর ২৩ নভেম্বর সকালে ঘুঘড়াগাছিতে বিতর্কিত প্রায় ২২ বিঘা জমি দখল নিয়ে গোলমালের সময়ে গুলিতে খুন হয়েছিলেন অপর্ণা বাগ। গুরুতর জখম হয় শ্যামলী তরফদার, লতিকা তরফদার ও একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাজীব মণ্ডল। ওই ঘটনায় লঙ্কা-সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁদের সকলকেই ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিলেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (তৃতীয়) পার্থসারথী মুখোপাধ্যায়।