সাজা শুনেই বদলার হুমকি লঙ্কা-বাহিনীর

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করে বিচারক এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই স্বমূর্তি ধারণ করলেন লঙ্গা ও তাঁর সঙ্গী আসামিরা। চিৎকার করে রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো তো আছেই। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের চিহ্নিত করে হুমকি দেওয়াও বাদ গেল না। একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন সেই লঙ্কাই।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০১:২৯
Share:

গালি দিতে-দিতেই ভ্যানে উঠলেন লঙ্কা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

গোবেচারার মতো মুখ করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ওঁরা সকলেই। একেবার সামনে হাত জোড় করে লঙ্কেশ্বর ঘোষ ওরফে লঙ্কা। এমন চোখ পিটপিট করে বিচারকের দিকে চাইছেন, যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেন না।

Advertisement

কিন্তু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করে বিচারক এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই স্বমূর্তি ধারণ করলেন লঙ্গা ও তাঁর সঙ্গী আসামিরা। চিৎকার করে রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো তো আছেই। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের চিহ্নিত করে হুমকি দেওয়াও বাদ গেল না। একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন সেই লঙ্কাই।

শনিবার বেলা ২টোর খানিক পরে আসামিদের এজলাসে হাজির করা হয়েছিল। তার পরেই চলে আসেন বিচারক মধুমিতা রায়। সাজা শুনিয়ে তিনি এজলাস ছাড়তেই সকলকে চমকে দিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দেন লঙ্কা ও তাঁর দলবল। চিৎকার করে তাঁরা বলতে থাকেন, কোনও সাক্ষীই যখন তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে কিছু বলেনি, তখন কী ভাবে তাদের সাজা দিলেন বিচারক?

Advertisement

আরও পড়ুন: লঙ্কাদের ভয়ে এখনও কাঁটা ঘুঘড়াগাছি

এরই মধ্যে এজলাস থেকে বাইরে বেরোতে গিয়ে তাঁদের নজরে পড়ে যান এই প্রতিবেদক। কাঠগড়ার ভিতর থেকে চেঁচিয়ে লঙ্কা বলতে থাকেন, “তোদের জন্যই আমাদের সাজা পেতে হল। আমাদের বিরুদ্ধে তোরা লাগাতার লিখে গিয়েছিস। তাই বিচারক আমাদের সাজা দিতে বাধ্য হয়েছে।” তাঁর সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরাও চিৎকার করে গালিগালাজ শুরু করেন। ‘জেল থেকে বেরিয়ে দেখে নেব’, ‘হিসেব বুঝে নেব’ বলে আঙুল উঁচিয়ে হুমকি দেওয়া হতে থাকে।

পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ছুটে আসেন পুলিশকর্মী ও আইনজীবীরা। পুলিশ ধমকে লঙ্কাদের চুপ করানোর চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু তাঁরা তখন এতটাই মরিয়া, সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের বের করে নিয়ে যায় পুলিশ। ভিতরে তখনও গজরাচ্ছে লঙ্কারা। খানিক বাদে এজলাস থেকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তোলার পরেও তাঁরা তোড়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। তাঁদের সঙ্গে গলা মেলান পরিবারের লোকজনও।

এক বছর আগে ফাঁসির সাজা শুনে কিন্তু এই প্রতিক্রিয়া দেখাননি লঙ্কা বা তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গেরা। বরং সেই রায় শুনে কিছুটা বিধ্বস্তই হয়ে গিয়েছিলেন। কৃষ্ণনগর আদালতে মামলা ফেরত আসার পরে তাঁরা প্রায় ভোল বদলে ফেলেন। কোনও ঔদ্ধত্য না দেখিয়ে বরং রোজ হাত জোড় করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। এ দিনও রায় শোনার আগে পর্যন্ত তেমনই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আইনজীবীদের একাংশের মতে, মামলাটি পুনর্বিবেচনার জন্য ফিরে আসার পরে সওয়াল-জবাব যে ভাবে এগিয়েছিল, তাতে হয়তো লঙ্কাদের ধারণা হয়েছিল যে তাঁরা প্রমাণাভাবে বেকসুর খালাস হয়ে যাবেন। শেষ পর্যন্ত তা না হওয়ায় তাঁরা ভালমানুষি ছেড়ে স্বমূর্তি ধারণ করেছেন। আর এক আইনজীবীর মতে, “মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে না জেনেই ওরা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন