ধৃত চামেলি। নিজস্ব চিত্র
কাশির সিরাপের কারবার চালানোর অভিযোগে প্রায় দু’বছর জেলে রয়েছে তার স্বামী। স্বামীর অবর্তমানে অস্ত্রের কারবারে যে সে নিজেই হাত পাকিয়ে নিয়েছিল এ দিন নুরুন্নেসা বিবিকে গ্রেফতারের পরে তাই সামনে এসেছে বলে পুলিশের দাবি। বিহারের মুঙ্গেরের ধৃত দুই অস্ত্রকারবারিকে গ্রেফতারের পরে তাদের জেরা করার সময়েই উঠে এসেছিল চামেলি উরফে নরুন্নেসার নাম। এ দিন তার কাছেই অস্ত্র কেনার নাম করে গোপন ডেরা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রবিবার সন্ধ্যায় বহরমপুরের প্রাঙ্গণ মার্কেটের কাছ থেকে বিহারের মুঙ্গেরের দুই অস্ত্র কারবারিকে ১৪০ রাউন্ড গুলি-সহ গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছিল দৌলতাবাদে কালুপুর এলাকার নুরুন্নেসার নাম। মহিলা পুলিশ নিয়ে গিয়ে রাতেই তাকে গ্রেফতেরা কর পুলিশ।
তার গ্রেফতারির ঘটনায় অবাক কালুপুরের বাসিন্দারা। মাদক কারবারে গ্রেফতার হলেও চামেলি যে, এমন কারবারে যুক্ত তা জানতেন না গ্রামবাসীরা। ধৃত তিন জনকে সোমবার বহরমপুরে সিজেএমের এজলাসে তোলা হলে বিচারক তাদের ৭ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বহরমপুরের মুঙ্গের যোগ অবশ্য নতুন নয়। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের হিসেব বলছে, ২০১৮ সালে ৩৮৮টি অস্ত্র, ৮৪৫টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে ৪৩২ জন। এ বছর সোমবার পর্যন্ত ১৪৫টি অস্ত্র, ৪৭২টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে ৬৭ জন। এরা সকলেই বিহারের মূঙ্গের ও তার আশপাশের এলাকার।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘চামেলির স্বামী তহসিন শেখ ২০১৭ সালে মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলবন্দি। স্বামীর অবর্তমানে চামেলিই অস্ত্র কারবারে হাত পাকিয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা চামেলি-সহ আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছি।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার সন্ধ্যায় বহরমপুরে প্রাঙ্গণ মার্কেটের সামনে ওঁত পেতে অপেক্ষায় ছিলেন বহরমপুর থানার পুলিশ। মোহনা বাস টার্মিনাসে বাস থেকে নেমে মুঙ্গেরের বাসিন্দা মধ্য ষাটের ভরত যাদব ও বছর ত্রিশের অরবিন্দ ঠাকুর প্রাঙ্গণ মার্কেটের কাছে অপেক্ষা করছিল। সে সময় পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে। তখন তারা পুলিশকে ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করে। দু’জনের কাছ থেকে মোট ১৪০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের শরীরে পোশাকের মধ্যে ওই সব গুলি রাখা ছিল। তারাই পুলিশকে জানায়, দৌলতাবাদের চামেলি বিবি ও রফিকুলকে এই গুলি বিক্রি করতে এসেছিল তারা। এর পরে পুলিশ দৌলতাবাদে অভিযান চালিয়ে চামেলিকে গ্রেফতার করতে পারলেও রফিকুল পলাতক।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, গত বছর হেরোইন বিক্রি করার অভিযোগে খাগড়া থেকে পুলিশ এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে। সে এখনও জেলবন্দি। মাদক মামলায় কোনও মহিলা গ্রেফতার হলেও অস্ত্র কারবারে এই প্রথম মুর্শিদাবাদে কোনও মহিলা গ্রেফতার হল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চামেলির স্বামী বছর চল্লিশের তহসিন শেখ গ্রামের অবস্থা সম্পন্ন। তারা দুই ভাই। মৌলানা পাশ তহসিন মাঠের জমি দেখাশোনা করার পাশাপাশি মাদক কারবার চালাত বলে অভিযোগ। ২০১৭ সালে কান্দি থানার পুলিশ তহসিনকে মাদক মামলায় গ্রেফতার করেছে। তার স্ত্রী চামেলিকে গ্রামের লোকজন সাদাসিধে বলে জানতেন। তবে পুলিশের দাবি, স্বামীর অবর্তমানে সে অস্ত্র কারবারে হাত পাকিয়েছিল।