রফিক খুনে ধৃত আশরফ

তৃণমূল নেতা আশরফ গত কয়েক বছর ধরেই চাপড়া থানার বিস্তীর্ণ এলাকায় ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন। ২০১৩ সালে বেতবেড়িয়া হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচন ঘিরে ঝামেলা হয়। খুন হন সিপিএম নেতা আসাদুল শেখ। সেই সময়ে তিনি ভাত খেতে বসেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাপড়া শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪১
Share:

আশরফ ঘরামি। হাজিরা আদালতে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

এক সময়ে তাঁর দাপটে ঘরছাড়া ছিলেন বিরোধীরা। বেতবেড়িয়ার সেই তৃণমূল নেতা আশরফ ঘরামিকে দলেরই এক কর্মীকে খুনের মামলায় গ্রেফতার করল পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ জানায়, শনিবার ভোরে বেতবেড়িয়া গ্রাম থেকে আশরফকে ধরা হয়। তিনি গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। শনিবার কৃষ্ণনগর আদালতে হাজির করানো হলে তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ১৮ নভেম্বর চাপড়ার ব্রহ্মনগরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজির সময়ে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় বেতবেড়িয়ার বাসিন্দা রফিক শেখের। আহত হন শামিম শেখ নামে এক জন। আশরফ-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে চাপড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে রফিকের পরিবার। পাল্টা হিসেবে, হৃদয়পুরের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সফিউদ্দিন শেখও তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। সেই ঘটনায় দুই তরফের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে চাপড়া থানার পুলিশ। আশরফ পলাতক ছিলেন।

Advertisement

তৃণমূল নেতা আশরফ গত কয়েক বছর ধরেই চাপড়া থানার বিস্তীর্ণ এলাকায় ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন। ২০১৩ সালে বেতবেড়িয়া হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচন ঘিরে ঝামেলা হয়। খুন হন সিপিএম নেতা আসাদুল শেখ। সেই সময়ে তিনি ভাত খেতে বসেছিলেন। তাড়া করে তাঁকে খুন করা হয়। অভিযোগ উঠেছিল আশরফের বাহিনীর দিকে। কিন্তু সেই সময়েও তাঁর বিরুদ্ধে কার্যত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং সেই রাতেই আশরফের দাপটে ঘরছাড়া হন শ’খানেক সিপিএম কর্মী-সমর্থক।

এর পর থেকেই এলাকায় দাপট বাড়তে থাকে আশরফের। এক সময়ে তাঁর মাথার উপরে হাত ছিল চাপড়া ব্লক তৃণমূলের নেতা তথা দলের যুব সংগঠনের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি শুকদেব ব্রহ্মের। পরে শুকদেব দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। কিন্তু তাতে আশরাফের দাপট কমেনি, বরং বেড়েছে। ২০১৩ সালের ভোটের পর হৃদয়পুর পঞ্চায়েতের প্রধান হন আশরফের স্ত্রী আলেয়া বিবি। গত বছর ফের ভোটে জিতে হৃদয়পুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন তিনি। দু’টি নির্বাচনেই এই এলাকায় একাধিক আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি বলে অভিযোগ।

এই সময়টায় আশরফকে বিশেষ ঘাঁটাননি দলের নেতারা। কিন্তু ক্ষোভ বেড়েছে এলাকায়। তার জেরে ক্রমেই জায়গা তৈরি করেছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা নির্বাচনের পরে বিজেপিতে যোগ দেয় গ্রামের অধিকাংশ পরিবার। বিজেপির হাত ধরে ঘরছাড়া সিপিএম কর্মীরাও গ্রামে ফেরেন। গ্রামে তো বটেই, দলেও কোণঠাসা হয়ে পড়তে থাকেন আশরাফ। নেতারাও আর তাঁকে প্রশ্রয় দিচ্ছিলেন না। শেষে ঘর ছাড়তে হয় তাঁকেই।

চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলেন, “আশরফের বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু দল তাঁকে কখনও প্রশ্রয় দেয়নি, এখনও দেবে না। আইন আইনের পথেই চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন