চুরি: শেষ চুরি কাঁসা পিতলের এই কারখানায়। —নিজস্ব চিত্র।
শিল্পী চেনা যায় শিল্পকর্ম দেখে।
আর সিঁধেল? সহজ উত্তর—সিঁধ দেখে। কিন্তু চারপাশে এমন কংক্রিটের জঙ্গলে সিঁধেল!
আজ্ঞে হ্যাঁ, গত দু’মাস ধরে সকাল হলেই ঠিক এ ভাবেই হোঁচট খাচ্ছিল মঠ-মন্দিরের শহর, নবদ্বীপ। চুরি হচ্ছিল একের পর এক কাঁসাপিতলের কারখানায়। সাত-সকালে কারখানা এসে কর্মী থেকে স্থানীয় লোকজন চুরির থেকেও বেশি অবাক হচ্ছিলেন চোরের ‘শিল্প’ দেখে।
মাস দু’য়েক আগেও একবার চুরি হয়েছে কাঁসাপিতলের কারবারি বাবু কংসবণিকের কারখানাতেও। বাবু বলছেন, ‘‘সেই ছেলেবেলায় সিঁধেলদের কথা শুনেছিলাম মশাই। এখনও যে তারা আছে তা এখন সিঁধে সিঁধে টের পাচ্ছি।’’ শুক্রবার গভীর রাতে সিঁধেলকেও দেখল নবদ্বীপ।
নবদ্বীপে দীর্ঘ দিন ধরেই কংসবণিকদের কাঁসাপিতলের ব্যবসা রয়েছে। রয়েছে কমবেশি গোটা চল্লিশ কারখানাও। মাটির মেঝে আর টিন কিংবা দরমার দেওয়াল দেওয়া সেই কারখানাতেই চুরি হচ্ছিল। পুলিশের দাবি, মাটির মেঝে হওয়াতেই পুরনো বিদ্যা কাজে লাগিয়েছে চোরেরা।
শুক্রবার অবশ্য শেষরক্ষা হল না। বমাল ধরা পড়ে গেল রাতের কুটুম। এ দিন রাতে বন্ধ কারখানায় খুটখাট শব্দ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় বাবু কংসবণিকের। সন্তর্পণে বিষয়টি জানান পড়শিদেরও। মুহূর্তের মধ্যে জনা বিশেক লোক বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু কারখানার কাছে যেতেই খুটখাট শব্দ বন্ধ। কারখানার বাইরে কেবল হাঁ করে আছে বাহারের সিঁধ।
চোর পালিয়েছে ভেবে সবাই তখন হাত কামড়াচ্ছেন। ফিরে যাওয়ার আগে শেষ বারের মতো চারদিকে এক বার নজর বোলাতে গিয়েই এক জনের সন্দেহ হয়। কারখানার অন্ধকার কোণে কি কেউ বসে আছে? টর্চের জোরালো আলো পড়তেই চোখ বন্ধ করে ফেলে সিঁধেল। তার পর আর পালানোর আর পথ পায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে গ্রেফতার করে সিঁধেলকে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সুখেন অধিকারীর বাড়ি চর স্বরূপগঞ্জে। দলে তারা দু’জন ছিল। সুখেন ঢুকেছিল ভিতরে। বাইরে পাহারা দিচ্ছিল আর এক জন। লোকজনকে আসতে দেখে দ্বিতীয় জন সরে পড়ে।