যে ক’জন আছো, সকলেই চলে এসো প্রথম বেঞ্চে। শুক্রবার বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ধর্মঘট মানে পড়ে পাওয়া ছুটির দিন।
তাই শুক্রবার বহরমপুরে উত্তরবঙ্গ বাস টার্মিনাস লাগোয়া প্রায় সাড়ে চার একরের কাটা ধোপঘাটি পুকুর মাছ-শিকারীর জন্য খুলে দিয়েছিলেন মালিক। হাজার টাকা গুনে দিলেই ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যত খুশি মাছ ধরার সুযোগ!
বহরমপুর পুরসভার থেকে তিন বছরের লিজে ওই পুকুর নিয়েছেন কপিল রাজবংশী। ধর্মঘটের টোপ দিয়ে ছিপে গেঁথে ফেলেছেন জনা বিশ মেছুড়েকে। তালিকায় হরিহরপাড়া থেকে আসা হাইস্কুল শিক্ষক, জেলা প্রশাসনিক ভবনের চুক্তিভিত্তিক কর্মী, ব্লকের ডিপ-টিউবওয়েল অপারেটর, মেজাজি দোকানদার— কে নেই! শুধু কি মাছ ধরা? পুকুরের পাড়েই রান্নার ব্যবস্থা। একেবারে হাতে-গরম ‘মৎস্য মারিব খাইব সুখে!’
এঁদের মধ্যে ছিলেন বাস কন্ডাক্টর তপু বাগচিও। এ দিন সকাল থেকে বেসরকারি বাস পথে নামেনি। সেই সুযোগে তিনি এসেছেন। সরকারি বাস চললেও যাত্রী নগণ্য। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। সরকারি কর্মী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা, বেশির ভাগই হাজিরা দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ সরকারি অফিসে কমই এসেছেন কাজ নিয়ে। হাসপাতালেও রোগী কম। তবে ছাত্রছাত্রীদের তেমন দেখা মেলেনি। বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলে গুটি চার ছাত্রকে ক্লাসে দেখে শিক্ষক বলেন— ‘‘সব ফার্স্ট বেঞ্চে এগিয়ে এসো তো বাপু। আর তো কেউ নেই!’’ বেশির ভাগ শিক্ষক স্কুলে এলেও দু’এক জন শিক্ষক কিন্তু ডুব মেরেছেন। হরিহরপাড়ার মেছুড়ে শিক্ষক যেমন। লালগোলা ডিহিপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চাবি নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা সাদা কাগজে হাজিরা দিয়ে পুলিশের হাতে জমা দেন।
শিল্প ধর্মঘট হলেও জঙ্গিপুরের বিড়ি শিল্পাঞ্চলে প্রায় কোনও প্রভাবই পড়েনি। বরং ‘সিঙ্গুর উৎসব’ পালনের নামে নানা জায়গায় লাঠি হাতে পথে নামে তৃণমূলের বাইক বাহিনী। এক দল আবার বহরমপুর পুরসভার প্রধান ফটকের তালা ভাঙে। তাণ্ডব চালানো হয় মুর্শিদাবাদ পুরসভাতেও। সমশেরগঞ্জে তিন পাকুড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতেও মারপিট হয়। পুলিশ জানায়, জেলায় মোট ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ জনই কান্দির। ধৃতেরা সবাই ধর্মঘটের সমর্থক বলে জানিয়ে সিটুর জেলা সম্পাদক তুষার দে দাবি করেন, ‘‘ধর্মঘট ছিল সর্বাত্মক।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) এনাউর রহমান অবশ্য বলেন, ‘‘সরকারি অফিসে হাজিরা ছিল একশো শতাংশ। জনজীবন ছিল স্বাভাবিক।’’