বহরমপুর স্টেডিয়ামে খেলা নয়, হয় কেবল নানা অনুষ্ঠান

ফুটবল খেলে, এমন দলের অভাব নেই বহরমপুরে। অভাব নেই ক্রিকেট দলেরও। শহরের ভিতরেই ১১০ বিঘা জমি জুড়ে রয়েছে বিশাল স্টেডিয়াম। অথচ সেই স্টেডিয়ামে কিন্তু ফুটবলারদের ফুটবল খেলার ‘হুকুম’ নেই। নেই ক্রিকেটের সুযোগও। ফলে বাধ্য হয়েই সিনিয়র ডিভিশন জেলা ফুটবল লিগ চলছে অন্য মাঠে।

Advertisement

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:৩৪
Share:

আগাছায় ভরেছে স্টেডিয়াম। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

ফুটবল খেলে, এমন দলের অভাব নেই বহরমপুরে। অভাব নেই ক্রিকেট দলেরও। শহরের ভিতরেই ১১০ বিঘা জমি জুড়ে রয়েছে বিশাল স্টেডিয়াম। অথচ সেই স্টেডিয়ামে কিন্তু ফুটবলারদের ফুটবল খেলার ‘হুকুম’ নেই। নেই ক্রিকেটের সুযোগও। ফলে বাধ্য হয়েই সিনিয়র ডিভিশন জেলা ফুটবল লিগ চলছে অন্য মাঠে। স্টেডিয়ামের ফুটবল মাঠে দেড় মাস ধরে চলছে পুলিশ কর্মী নিয়োগের শারীরিক পরীক্ষা। কেবল পুলিশ কর্মী নিয়োগ নয়, সেনা বাহিনী বা আধা সামরিক বাহিনীতে নিয়োগের শারীরিক পরীক্ষার জন্যেও স্টেডিয়ামের ফুটবল মাঠই পাকাপাকি ভাবে বরাদ্দ। ফলে ফুটবলের মতো ক্রিকেট লিগের বেলাতেও মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রীড়া সংস্থা (এমডিএসএ)-র কর্তাদের অন্য মাঠের দারস্থ হতে হয়।

Advertisement

১১০ বিঘা জমির এক কোনায় মাত্র কয়েক বিঘা জমিতে গড়ে তোলা ফুটবল গ্রাউন্ডটি বাদ দিলে বাকি জমিটাই ফাঁকা পড়়ে। উঁচু পাচিল ঘেরা ফাঁকা জায়গায় সার্কাস বসে। চলে এক-দু’মাস মেয়াদের মেলাও। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী থাকার সময়ে ওই ফুটবল মাঠের গ্যালারিতে মুর্শিদাবাদের মানুষকে বসিয়ে আকাশপথে ও ফুটবল মাঠে সামরিক বাহিনীর বিশেষ কসরৎ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বহরমপুর শহরে সরকারি ও বেসরকারি রাজনৈতিক জমায়েত বা প্রশাসনিক জনসভা করা হলে যোগদানকারী জনতার পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত বাস লরি রাখা হয় স্টেডিয়ামের ভিতরেই।

হয় এমনই নানা কাণ্ড। হয় না শুধু খেলা! যেমন, বছর তিনেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে প্রশাসনিক জনসভা করতে এলে স্টেডিয়ামের দু’দিকের পাচিল ভেঙে কয়েক’শো যানবাহন রাখা হয়। তিন বছরেও সেই ভাঙা পাচিল জোড়া লাগেনি। বিপরীত দৃষ্টান্তও আছে। এমডিএসএ-র আর্থিক দিকটা দেখেন সিপিএমের বহরমপুর জোনাল কমিটির সদস্য তরুণ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘গত লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে বহরমপুরে এসেছিলেন রাহুল গাঁধী। তখনও স্টেডিয়ামের পাঁচিল ভাঙতে হয়েছিল। সভার পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ভাঙা পাঁচিল সুন্দর করে জোড়া দেওয়া হয়।’’

Advertisement

মমতার সভার সৌজন্যে পাঁচিল ভাঙা স্টেডিয়াম আজ খোলা হাট। স্টেডিয়াম চত্বর জুড়ে ঝোপঝাড়। উত্তর-পূর্বপ্রান্ত ঘন জঙ্গলে ভরা। প্রবেশপথ থেকে শুরু করে গোটা মাঠে পার্থেনিয়ামের আর কাশের জঙ্গল। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে অসমতল ফুটবল মাঠের খানাখন্দে জল জমেছে। প্রায় ৪০ বছর আগের তৈরি স্টোডিয়ামের পূর্বদিকের ৪টি গ্যালারির নির্মাণ কাজ আজও অসমাপ্ত। পশ্চিমদিকের গ্যালারি ভেঙে পড়ছে।

অথচ এই শহরের ফুটবল ঐতিহ্য বেশ শ্লাঘার। গবেষক সায়ন্তন মজুমদারের দাবি, সদ্য প্রয়াত সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের জেঠামশাই করুণাশঙ্কর ভট্টাচার্য বহরমপুর শহরের ভূমিপুত্র। করুণাশঙ্কর ১৯৩০ সালে মোহনবাগানের হয়ে খেলতে শুরু করেন। ১৯৩৩ সালে মোহনবাগানের হয়ে সিংহল গিয়েছেন। পরের বছর গোষ্ঠপালের অধিনায়কত্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলেন। ১৯৩৮ সালে অধিনায়াক হন। ওই বছর তাঁর নেতৃত্বে টিম যায় অস্ট্রেলিয়া। সেখানে করুণাশঙ্কর ভট্টাচার্যকে ‘মাস্টার অব ফুটবল’ সম্মান দেওয়া করা হয়। শহরের একমাত্র স্টেডিয়ামের দুয়োরানির দশা চার দশকেও ঘুচল না কেন?

এমডিএসএ-র অন্যতম কর্মকতা তথা সিপিএমের বহরমপুর জোনাল কমিটির সদস্য তরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাবলিক প্রাইভেট মডেলে অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম গড়ার জন্য ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তা বাস্তবায়িত করার জন্য সব মত ও পথের লোকজন নিয়ে ২০০৮ সালে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে সেমিনার করা হয়। কিন্তু প্রমোটারকে জমি বিক্রি করে দেওযা হচ্ছে বলে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে সেই পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দেয় বহরমপুর টাউন কংগ্রেস।’’ টাউন কংগ্রেস সভাপতি অতীশ সিংহ তা মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘ওঁরা তো স্টেডিয়ামের অর্ধেক জমি পিপি মডেলে দীর্ঘ মেয়াদি লিজের নামে বিক্রি করে দেওয়ার ছক কষেছিল। তাই ওঁদের প্রস্তাব দিয়েছিলাম স্টেডিয়ামটি বহরমপুর পুরসভাকে দেওয়া হোক। পুরসভা আধুনিকীকরণের দায়িত্ব নেবে। কিন্তু ওঁরা দেননি।’’

এমন চাপানউতরে আশার কথা শুনিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদ জেলা স্কুল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস কাউন্সিলের কার্যকরী সভাপতি তপন ত্রিপাঠি। তিনি জানিয়েছেন, ইনডোর স্পোর্টস কমপ্লেক্স, ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ২টি সুইমিং পুল, হকি, খো খো, কবাডি, ক্রিকেট মাঠ, টেনিস কোর্ট, ইয়্যুথ হোস্টেল, ফুডকোট, জিম, প্যাভেলিয়ন-সহ অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম গড়ার জন্য ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প অতি সম্প্রতি অনুমোদিত হয়েছে। তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের দাবি, আধুনিক সুযোগ সুবিধার নিরিখে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের পরই ঠাঁই হবে বহরমপুরের স্টেডিয়ামের। তাঁর কথায়, ‘‘রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে প্রস্তাবিত স্টেডিয়ামের গ্যালারির মাথার উপরে থাকবে ছাদ। থাকবে স্থায়ী হেলিপ্যাড। সেই হেলিপ্যাড ভাড়া নিয়ে সার্কাস বা মেলার আয়োজন করা যাবে।’’

পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ঐতিহাসিক ব্যারাক স্কোয়ার বাঁচবে। এ শহরের খেলার সু’দিন ফেরার সম্ভবনাও তৈরি হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement