প্রতীকী ছবি।
একটা সময়ে মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল ডোমকলের জরিমন বেওয়া এবং ছাপাতন বেওয়ার। দুই জনেই অবশ্য ভিক্ষে করে দিন গুজরান করেন। কিন্তু বনিবনা হতো না একেবারেই।
কখনও জরিমন বলতেন, ‘‘ওটা আমার বাঁধা দোকান। তুমি কেন আমার আগে ঢুকে পড়লে?’’ ছাপাতন পাল্টা উত্তর দিতেন, ‘‘এমন করছ, যেন ওটা তোমারই দোকান! যে আগে আসবে সেই যাবে।’’
এখন ছবিটা এক্কেবারে বদলে গিয়েছে। জরিমন ও ছাপাতনের গলায় গলায় ভাব। ভিক্ষে থেকে বাজারহাট, সবই তাঁরা একসঙ্গে করছেন। সঙ্গে ডেকে নিয়েছেন আরও কয়েক জনকে। তাঁদের সকলকে মিলিয়ে দিয়েছে এক টাকার কয়েন! সেই নোট বাতিলের পর থেকে খুচরো ঝামেলায় জেরবার দুই জেলা, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ। কখনও রটেছে দশ টাকার কয়েন নকল । তার পর থেকে দশ টাকার কয়েন নিতে চাইছিলেন না ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই।
প্রশাসন ও ব্যাঙ্ক কর্তারা নাগাড়ে প্রচার করলেন, এ সব মিথ্যে গুজবে কান দেবেন না। দশ টাকার কয়েনে কোনও সমস্যা নেই। আপাত ভাবে সমস্যা মিটল। কিন্তু ফের গোল বাধল এক টাকা, দু’টাকা ও পাঁচ টাকার কয়েনে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া কিংবা সরকারি নির্দেশের তোয়াক্কা না করে নানা এলাকায় নিজেদের মতো করে কয়েন ‘বাতিল’ করে দিলেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের একাংশ।
নিট ফল, কয়েক মাস ধরে খুচরো ভোগান্তি রোজনামচা। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, এই খুচরো নিয়ে অশান্তি, হাতাহাতি কিছুই বাদ নেই। কখনও পুলিশ এসে চমকে-ধমকে-বুঝিয়ে কয়েন নিতে বাধ্য করেছে। কিন্তু ওরা চলে যাবার পরে যে কে সেই। কয়েন চালানোর জন্য তো আর পুলিশ ডেকে বাজার যাওয়া যায় না! ছাপাতন কিংবা করিমপুরের কিছু ভিখারি বলছেন, ‘‘এক টাকা তো কেউ নিতেই চাইছে না। তা হলে আমরাই বা নেব কী করে? সেই কারণে কখনও পাঁচ, কখনও দশ জন একসঙ্গে ভিক্ষেয় বেরোচ্ছি। পাঁচ টাকা বা দশ টাকা যে যা দিচ্ছে, ভাগ করে নিচ্ছি।’’ এক পেট্রোল পাম্প মালিক বলছেন, ‘‘ক্রেতাদের থেকে খুচরো নিচ্ছি। কিন্তু ব্যাঙ্ক খুচরো নিচ্ছে না। পাম্পে লক্ষাধিক টাকার কয়েন জমা হচ্ছে।” কল্যাণীর এক চা বিক্রেতাকে খুচরোয় দাম মেটাতে গেলে কৃষ্ণনগরের এক যুবককে শুনতে হয়েছে, ‘‘আপনি জানেন না এই এলাকায় ছোট এক টাকার কয়েন অচল। বারাসতের পর থেকে ও টাকা চলবে।’’ যা শুনে বিস্মিত ওই যুবক বলছেন, ‘‘একই দেশে একই টাকা কোথাও অচল, কোথাও সচল! এমন আজব নিয়ম তো আগে শুনিনি!’’
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এক টাকা থেকে ১০ টাকা, কোনও কয়েন অচল ঘোষণা করেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। লোকজনকে সচেতন করা হচ্ছে। যদিও গাঁ-গঞ্জ-মফস্সল-শহরে সচেতনতার ছবি চোখে পড়ছে না।
(চলবে)