এ ভাবেই সেজে উঠেছে ঘর। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।
পাকা ঠিকানা নয়।
তবে, খোলা ফুটপাথ, প্ল্যাটফর্মের চাতাল কিংবা রাস্তা-রোয়াকের আনাচ কানাচে কোনওক্রমে দিন যাপন থেকে চালচুলোহীন শিশুদে র জন্য নির্দিষ্ট হোমে পাড়ি দেওয়ার আগে অন্তত এক রাতের জন্যও থানায় তাদের আতিতেয়তা দিতে তৈরি হয়েছে মজার এক ঘর।
সে ঠিকানার নাম—শিশু-বান্ধর ঘর, বেলডাঙা থানা, মুর্শিদাবাদ। ঘরময় ছোটা ভীম থেকে নন্টে-ফন্টের দুঁধে পোস্টার, টিনটিন কিংবা টেডি বিয়ারের ছড়াছড়ি। এমনকী ঘরের টিভিতে অনর্গল চলছে কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেল।
রাজ্যের প্রথম থানা হিসেবে বেলডাঙাতেই তৈরি হয়েছে এমনই শিশু-বান্ধব ঘর বা চাইল্ড-ফ্রেন্ডলি রুম।
শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলছেন, ‘‘প্রতিটি থানাতেই তো এমন হওয়ার কথা। বেলডাঙা দিয়ে শুরু হল। অন্য থানাতেও এমন ঘর থাকবে।’’ জানাচ্ছেন, অপরাধ করেনি, এমন নাবালকদের উদ্ধারের পরে, আদালতের নির্দেশে হোমে পাঠানোর আগে অন্তত ‘একটু বন্ধুত্বপূর্ণ’ পরিবেশ তাদের হাতে তুলে দিতেই এই ব্যবস্থা।
সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এ রায় দিয়েছে অনেক আগেই। উদ্ধারের পরে চালচুলোহীন অনাথ শিশু থেকে হোটেল-কারখানার শিশু-শ্রমিকদের এমনই এক পরিবেশে রাখার কথা পুলিশের। রাজ্যে যে ব্যবস্থা এত দিন ছিলই না।
রাজ্য জুভেনাইল বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য তথা শিশু-অপরাধ বিশেষজ্ঞ কুনাল দে ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘দেশের প্রতিটি থানাতেই এই ব্যবস্থা থাকার কথা। কারণ, কোনও নাবালক, সে অপরাধ করুক বা না-করুক, তাকে পুলিশ লক আপে রাখা যায় না।’’ তিনি জানান, কোনও অপরাধের দায়ে ধৃত নাবালককে রাখার কথা পুলিশি হেফাজতে। তবে তা কখনওই পুলিশ লক আপ নয়। তিনি জানান, সেক্ষেত্রে পুলিশ মনে করলে নিজেদের কোয়ার্টারে কিংবা কোনও দম্পতির কাছেও ‘সেফ কাস্টডি’ হিসেবে বেছে নিয়ে তাকে রাখতে পারে। পরে যাকে রাখা হবে, স্পেশ্যাল হোমে। কিন্তু অনপরাধী নাবালককে এমনই পরিবেশে রাখার কথা। তিনি বলেন, ‘‘পরিবেশই শিশু মনের পরিবর্তন এনে দিতে পারে। দিতে পারে ভরসা। সে জন্যই এই ব্যাবস্থা সর্বত্র করা উচিৎ।’’
মুর্শিদাবাদ জেলার এএসপি সুখেন্দু হীরা বলেন,‘‘জেলায় বেলডাঙা থানা দিয়েই প্রথম শিশু বান্ধব থানা তৈরি হল। পরে অন্যত্রও হবে।’’