প্রতীকী ছবি।
পটল গাছের ডগাগুলো ভোরের আলো মেখে মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে। অথচ কত যত্ন করে মাচাটা তৈরি করা হয়েছিল। সেই মাচা ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশের দুষ্কুতীরা। ভোরে মাঠে গিয়ে নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বিজয়পুরের অভিজিৎ বিশ্বাস। চরম আক্ষেপের সঙ্গে তিনি বলছেন, “ওদের জ্বালায় মাঠে চাষ করাই কঠিন। হয় ফসল নষ্ট করে, নইলে লুঠ করে। কাকে জানাব বলুন তো?”
মাথাভাঙার পাড়ে এক চিলতে জমি। ও পারে বাংলাদেশ। এ পারে ভারতের দিকে বেশ কিছু জমি আছে বাংলাদেশিদের। নদী পার হয়ে তাঁরাও আসেন চাষ করতে। জমি নিয়ে দু’দেশের মানুষের বিবাদ দীর্ঘ দিনের। তারই জেরে মাঝেমধ্যেই ফসলের ক্ষতি করে দিয়ে যায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। ভেঙে দেয় মাচা। রাতের অন্ধকারে সেই পটল কেটে নিয়ে যায় তারা। সেই সঙ্গে কলাবাগানের কলার কাঁদিও কাঁধে উঠে চলে যায় ও পারে।
বিজয়পুরের এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কিন্তু এত দিনেও কোনও সুরাহা হল না। কারণ, গ্রাম থেকে এক জন করে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু কতটুকুই বা তাঁর ক্ষমতা। যাঁদের ক্ষমতা আছে, তাঁরা তো আর এই গ্রামে আসেন না। সেই নির্বাচনের আগে এসেছিলেন বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। তার আগে বা পরে আর কোনও নেতা আসেননি? বেশ কিছুক্ষণ ভেবেও মনে করতে পারেন না গ্রামের মানুষ। আনন্দ ঘোষ বলছেন, “অনেক বছর আগে আমার বাবাকে মাঠে কুপিয়ে দিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশিরা। তাই নিয়ে কিছুটা হইচই হয়েছিল। তখন এক নেতা এসেছিলেন।” স্থানীয় সদস্য তৃণমূলেরই প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলছেন, “বিধায়ক এসে বৈঠক করে চলে গিয়েছেন। তাতে আমাদের গ্রামের মানুষের কোনও লাভ হয়নি।”
একেবারে বাংলাদেশ সংলগ্ন এই গ্রামের সমস্যা অনেক। কাঁটাতারের বেড়া নেই। সীমান্ত বলতে নদী। সেই সুযোগে এখনও চলে পাচার। চলে গরু পাচারও। গ্রামবাসীরা বলছেন, ‘‘এক দিকে গরু পাচারকারী, অন্য দিকে বিএসএফ। রাতের অন্ধকারে পাচারে বাধা দিলে পাচারকারীদের দিক থেকে বিপদ। আবার না দিলে বিএসএফ এমন আচরণ করে যেন গোটা গ্রামটাই পাচারের সঙ্গে যুক্ত।’’
বর্ডার রোড পার না হলে কোনও ভাবেই গ্রামে ঢোকা যায় না। ফলে পদে পদে বিএসএফের রক্তচক্ষু আর প্রশ্নবাণ। গ্রামের পানীয় জলের সমস্যা এখনও মেটেনি। গভীর নলকূপ বিকল হয়ে পড়ে আছে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোষ চৌধুরী বলছেন, “সরকারি সমস্ত পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয় ওই গ্রামে। এত বছর পর কাঁটাতারের বেড়া পড়ছে। সমস্যা মিটে যাবে।’’