প্রতীকী ছবি।
একে চারটে প্রধান দল, তার উপরে এক গুচ্ছ নির্দল প্রার্থী। ঠোকাঠুকিতে ভোট ভাগাভাগির কারণে কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতে যে কোনও দলই গরিষ্ঠতা পাবে না, তা কার্যত প্রত্যাশিত ছিল।হয়েছেও তা-ই।
নদিয়ায় ১৮৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৩৭টির ভাগ্য ঝুলে আছে। মুর্শিদাবাদে সংখ্যাটা ১৬। কোথাও বিজেপি, কোথাও তৃণমূল, কোথাও বা কংগ্রেস ‘ম্যাজিক সংখ্যা’র কাছে রয়েছে। তারা হিসেব কষছে, কার সমর্থন পাওয়া যেতে পারে।
এই নির্বাচনের একটি বৈশিষ্ট্য যদি হয় শাসক দল ছাড়া আর কারও প্রার্থী না থাকায় বহু আসনে ভোট না হওয়া, অন্য বৈশিষ্ট্য প্রচুর সংখ্যক নির্দল প্রার্থীর জিতে আসা। এঁদের বড় অংশই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল এবং ত্রিশঙ্কু হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েতের বেশ কিছুতে এঁরা বড় ভূমিকা নিতে চলেছেন।
চাপড়ার মহেশপুর পঞ্চায়েতের মহখোলা গ্রামের সদ্য নির্বাচিত নির্দল সদস্য ঝর্না বিশ্বাস তো এখন থেকেই বলছেন, “আমি তৃণমূলে ছিলাম, এখনও তৃণমূলেই আছি। শুধু টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।” আহিরণ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী আনসারুল শেখও নির্দল হিসেবে জিতে এসে জানিয়েছেন, দলের সঙ্গেই থাকতে চান।
ভোটের আগে ঘর সামলাতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা তর্জন-গর্জন করছিলেন, যাঁরা নির্দল হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়বেন, তাঁদের আর ফিরতে দেওয়া হবে না দলে। কিন্তু এখন সেই সুর পাল্টে গিয়েছে। দলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘নানা কারণে ওঁরা নির্দল হিসাবে লড়াই করে জিতেছেন। ওঁদের অনেকেই ফেরার জন্য যোগাযোগ করছেন। আমাদের দরজা খোলা।”
সেই সঙ্গে যে ঘোড়া কেনাবেচার খেলাও চলবে, তা সহজেই অনুমেয়। শমসেরগঞ্জের গাজিনগর মালঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী চার কংগ্রেস প্রার্থী উত্তম সাহা, সীমান্ত দাস, রুমা দাস ও মীর সোহরাব আলি শুক্রবার রাতেই যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তাঁদের সঙ্গে গিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির আসনে জয়ী কংগ্রেস সদস্য রমিশা বিবিও।
এই হিসেবে আরও কিছু পঞ্চায়েত তৃণমূলের ঝুলিতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে বিরোধীরা যে সহজে মাঠ ছেড়ে দেবে এমন মনে করারও কারণ নেই। মুর্শিদাবাদে ঝুলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে অন্তত ছ’টিতে বিজেপি নির্ণায়ক শক্তি হতে পারে। বাকিগুলিতে কোথাও নির্দল, কোথাও কংগ্রেস, কোথাও বামেরা হিসেবের মধ্যে থাকবে। কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট হলে কিছু পঞ্চায়েত তাদের দখলে যেতে পারে। তবে মজার কাণ্ড নওদার পাটিকাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে। সেখানে ১৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ও বাম পেয়েছে ছ’টি করে। একটি তৃণমূল। জোট করা বা তৃণমূলের সমর্থন আদায় ছাড়া আর যে রাস্তাটি খোলা থাকছে, তা হল দলবদল।
কংগ্রেস বা সিপিএমের পক্ষে তৃণমূল বা বিজেপির হাত ধরা কঠিন। বিজেপির মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ আবার বলেন, “আমরা কাউকে সমর্থন করব না। তৃণমূলকে রুখতে সিপিএম বা কংগ্রেস সদস্যেরা যদি চান, আমাদের সমর্থন করতে পারেন।”
আদালতে মামলা ঝোলায় বোর্ড গঠন জুলাইয়ের আগে হচ্ছে না। তার আগে অনেক হিসেবই পাল্টে যাবে।