সীমান্তের জওয়ানদের ফোঁটা। নিজস্ব চিত্র
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের কপালে ভাইফোঁটা দিলেন সীমান্তের বোনেরা। শুক্রবার মুরুটিয়ার শিকারপুর বিএসএফ ক্যাম্প এবং তেহট্টের বেতাই ক্যাম্পে পৃথক দু’টি ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান হল। পরিবার ছেড়ে বহু দূরে থেকেও ফোঁটা পেয়ে খুশি জওয়ানেরা।
ভাতৃদ্বিতীয়ায় রাজ্যের সর্বত্র যখন দিদি-বোনেরা ভাইকে ফোঁটা দিতে ব্যস্ত, অনেক বাঙালি জওয়ানই বাড়ি যেতে পারেননি। মনখারাপ করেই ছিলেন শিকারপুর ক্যাম্পের জওয়ান রানাঘাটের তাপস বিশ্বাস। করিমপুরের রুকাইয়া খাতুন তাঁকে ফোঁটা দেওয়ার পরে আপ্লুত তাপস বলেন, “ছোট থেকে প্রতি বছর এই দিনটিতে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতে থাকতাম। নিজের বোন না থাকলেও পিসতুতো বা মামাতুতো দিদি-বোনেরা ফোঁটা দিতে আসত। সব ভাই এক সঙ্গে বসে তাদের থেকে ফোঁটা নিতাম। বিএসএফে য়োগ দেওয়া ইস্তক গত ছ’বছর আমার আর ভাইফোঁটা নেওয়া হয়নি।’’
এ বার ছুটি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তাপসের। কিন্তু ছুটি মেলেনি। ‘‘বাড়ি যেতে না পেরে কষ্ট পাচ্ছিলাম। ক্যাম্পে কেউ ফোঁটা দেবে, ভাবতে পারিনি’’— বলেন তাপস। একটি অসরকারি সংস্থার সদস্যারা ফোঁটা দেন মহারাষ্ট্রের অমিত সালভে, ওড়িশার প্রশান্ত কুমার, অন্ধ্রপ্রদেশের পি সিবা-সহ তিরিশ জনকে। বাঙালি উৎসবের ছোঁয়ায় তাঁরা অনেকেই অভিভূত। অমিতের কথায়, “এই উৎসব আমাদের নেই। বাঙালি বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম। আজ নিজে অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে ভাল লাগছে। ফোঁটা দেওয়ার ছবি মোবাইলে তুলে বাড়িতে পাঠিয়েছি। তাঁরাও খুব খুশি হয়েছেন।”
বেতাই সীমান্তের মেয়েরা আবার ভাটুপাড়া ক্যাম্পে পঁয়ত্রিশ জন জওয়ানকে ভাই ফোঁটা দেন। সংস্থার সম্পাদক তারকনাথ দে বলেন, ‘‘ওঁরাও কারও ভাই বা দাদা। সবাই যখন আনন্দ করছে, ওঁরা নিজের পরিবার ছেড়ে দেশ পাহারা দিচ্ছেন। তাই তাঁদের ফোঁটা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’’ সংস্থার সদস্যা রুকাইয়া খাতুন, মিতা প্রামাণিকেরা ফোঁটা দিয়ে মিষ্টি খাওয়ান তাঁদের। সব জওয়ানকে নতুন গেঞ্জি ও কলম উপহার দেওয়া হয়।
বিএসএফের কোম্পানি কম্যান্ডার গুরুদত্ত পুন্দির জানান, সীমান্তের বাঙালিরা নিজেদের ভাই ভেবে ভিন্ প্রদেশের জওয়ানদের আপন করে নেওয়ায় সবাই ভীষণ খুশি।