কংগ্রেসের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র
মিছিলটা ক্রমশ এগিয়ে চলছে কুঞ্জঘাটা থেকে দক্ষিণে।
কালো মাথার ভিড় থেকে নাগাড়ে স্লোগান উঠছে—‘জনগণের সঙ্গে বেইমানির বিরুদ্ধে সমস্ত মানুষ এক হোন।’
হাতে প্ল্যাকার্ড—‘আর্থিক লোভে দলত্যাগী কাউন্সিলরদের ধিক্কার’ কিংবা ‘ডিগবাজি খাওয়া কাউন্সিলরদের ধিক্কার।’
মিছিলের সামনের সারিতে তিনি, গোলাপি শার্ট-কালো ট্রাউজার্স, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
কিন্তু সে তো পোশাকি পরিচয়।
এই শহর তো তাঁকে ‘দাদা’ বলেই চেনে। সোমবারের ধিক্কার মিছিলের স্লোগান ছাপিয়ে শহরের অলিগলি থেকে যে ভাবে ‘দাদা, দাদা’ বলে আওয়াজ উঠল—তা শুনে কি মুচকি হাসলেন অধীর?
এই শহর জানে তাঁর প্রথম সব কিছু। এই শহর তাঁর অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী। এই শহর এটাও জানে, সময়টা তাঁর ভাল যাচ্ছে না। জানেন অধীর নিজেও।
কিন্তু তারপরেও শহরের একটা অংশ এ দিন জানান দিল—এই অসময়েও তাঁরা আছেন। থাকবেনও।
মিছিল যত এগিয়েছে মোড়ে মোড়ে ততই বেড়েছে ভিড়। ঠিক আগের মতো। ‘দাদা’কে স্মার্টফোনে বন্দি করার জন্য সে কি আকুলিবিকুলি। ঠিক আগের মতো। মিছিল দেখতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গলির মুখে জড়ো হওয়া মহিলারও দু’হাত তুলে অধীরকে প্রণাম করেছেন। প্রতি নমস্কার জানিয়েছেন অধীরও। ঠিক আগের মতো। তবে আগের মতো চেনা অনেক মুখকেই এ দিন মিছিলে দেখা যায়নি।
তাতে অবশ্য মোড়ের মাথায় জমাট ভিড়ের কিছু যায় আসেনি। তাঁরা সটান জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমরা দাদাকে দেখে ভোট দিয়েছি। কোন কাউন্সিলর কোন দলে গেল, না থাকল তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না!’’
কেউ আশ্বস্ত করেছেন, ‘‘দাদা ঘাবড়াবেন না! বেইমানরা গিয়েছে। ভালই হয়েছে! দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল!’’ কংগ্রেসের টিকিটে জেতা ১৬ জন কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য গত রবিবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ৩০ বছর ধরে দখলে থাকা বহরমপুর পুরসভা কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। দলত্যাগীরা টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে বহরমপুর টাউন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ দিন বিকেলে শহরে ধিক্কার মিছিল বের করা হয়।
মিছিলে ছিলেন অধীর চৌধুরী ছাড়াও জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, জেলা কংগ্রেস সভাপতি ও বিধায়ক আবু তাহের খান। ছিলেন মনোজ চক্রবর্তী- সহ মোট ৭ জন বিধায়ক ও দলত্যাগ না করা ৮ জন কাউন্সিলর। এ দিনের মিছিল ও শহরের প্রতিক্রিয়া দেখে কংগ্রেসের নেতারাও কবুল করছেন, ‘‘এই অক্সিজেনটা খুব দরকার ছিল।’’