দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন নবদ্বীপের স্কুল

রবিবার রাজ্যের ১২টি জেলার মোট ১৬টি স্কুল নিয়ে আন্তঃজেলা ব্লাইন্ড স্কুল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল নদিয়া জেলা প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:০৫
Share:

মেয়েদের প্রদর্শনী ক্রিকেট ম্যাচের একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র।

এক বলে দু’রান। মাঠ জুড়ে টানটান উত্তেজনা। উঠে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তা, দর্শকেরা।

Advertisement

ঝুমঝুমির মতো শব্দ করতে করতে সাদা বলটা ক্রিজের উপর দিয়ে এগিয়ে চলেছে ও প্রান্তের ব্যাটসম্যানের দিকে। উত্তেজনায় পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছে নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলের দুই ছাত্রী। কোনও মতে বলটাকে ব্যাটে লাগিয়ে ছুটতে শুরু করে ওই স্কুলেরই প্রসেনজিৎ আদক। এক রান নেওয়ার পরে ফের ছুট। প্রসেনজিৎ পৌঁছনোর আগেই বল চলে যায় কলকাতার লাইটহাউস স্কুল ফর দ্য ব্লাইন্ড-এর উইকেট কিপারের হাতে।

কিন্ত দৃষ্টিহীন হওয়ায় ইউকেট খুঁজে পেতে সময় লাগে। তার আগেই দু’রান সংগ্রহ করে নেয় প্রসেনজিৎ। ‘হুররে, জিতে গিয়েছি’ বলতে বলতে নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলের পড়ুয়ারা হইহই করে ঢুকে পড়ে মাঠের ভিতরে। এতক্ষণ কেউ কেউ কাঁদছিল টেনশনে। এ বার চ্যাম্পিয়ন স্কুলের সবার চোখে জল। আনন্দের কান্না। মেয়েদের তখন যেন খেয়ালই নেই, তাদেরও এ বার মাঠে নামতে হবে।

Advertisement

রবিবার রাজ্যের ১২টি জেলার মোট ১৬টি স্কুল নিয়ে আন্তঃজেলা ব্লাইন্ড স্কুল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল নদিয়া জেলা প্রশাসন। দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল বলে দাবি প্রশাসনের। সেই ১৬টি স্কুলের মধ্যে ফাইনালে উঠেছিল নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুল ও কলকাতার লাইট হাউস স্কুল ফর দ্য ব্লাইন্ড। মঙ্গলবার খেলার শুরু থেকেই ছিল টানটান উত্তেজনা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কলকাতার স্কুলটি কোনও উইকেট না খুইয়ে ১৮১ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নবদ্বীপের স্কুলটি তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১৮২ রান।

ছেলেদের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি এ দিন মেয়েদেরও প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলের সঙ্গে খেলতে নামে হেলেন কেলার স্মৃতি বিদ্যামন্দির স্কুলের ছাত্রীরা। দুই স্কুলের খেলা মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। দু’ওভার করে খেলা হয়েছে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে হেলেন কেলার স্মৃতি বিদ্যামন্দির ৭ উইকেটে ১৫ রান সংগ্রহ করে। নবদ্বীপের এপিসি ব্লাইন্ড স্কুল উইকেটও না হারিয়ে সেই রান তুলে দেয়। এই প্রতিযোগিতার অন্যতম উদ্যোক্তা কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক ইউনিস রিসিন ইসমাইল বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। আমরা সেটা করতে পেরেছি।” আর চ্যাম্পিয়ন নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলের খেলোয়াড়রা বলছে, ‘‘সব দল ভাল খেলেছে। আমরা সকলেই চ্যাম্পিয়ন। এ জয়ও আমাদের সকলের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন