পুরভোটের মুখে ডোমকল সেই চেনা ডোমকলেই।
রবিবার সকালে ঘড়িতে তখন ন’টা। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠল বর্তনাবাদের স্কুলপাড়া।
পুলিশ ক্যাম্প থেকে তিন মিনিটের হাঁটা পথ। ডোমকল থানা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্ব। বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, তবু ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছতে লেগে গেল ৩ ঘণ্টা।
বাম ও কংগ্রেসের অভিযোগ, রবিবার সকালে গ্রামের একটি বাড়িতে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। জখম হয়েছে জনা কয়েক লোক। কিন্তু তারা শাসক দলের লোক হওয়ায়, পুলিশ ইচ্ছে করেই দেরি করে আসে। যাতে সেই সুযোগে রক্তের দাগ কিংবা বিস্ফোরণের সমস্ত চিহ্ন সাফ করে ফেলতে পারে অভিযুক্তরা।
যদিও ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসানের দাবি, ‘‘এমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই। ঘটনার খবর পেয়ে আমাদের ফাঁড়ি থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তবে তারা বোমা বা বিস্ফোরণের কোনও হদিস পায়নি। একটা টায়ার ফেটেছে বলে শুনেছি।’’
স্থানীয়রা অবশ্য জানাচ্ছেন, বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে প্রতিবেশিরা ছুটে গেলেও কিছু ক্ষণের মধ্যে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে তৃণমূলের লোকেরা। গ্রামের চাষি আমির মণ্ডলের টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িটিও ঘিরে ফেলে তারা।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের জোট-প্রার্থী মাসাদুল ইসলামের কথায়, ‘‘আমির মণ্ডলের বাড়িতে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। তার পরেই কিছু লোকজন দৌড়তে শুরু করে। তবে তৃণমূলের লোকেরা অন্য কাউকে ওই বাড়ির ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। শুনেছি আমির মণ্ডলের স্ত্রী-সহ ৩ জন জখম।’’
যদিও ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী তৃণমূলের সৌমিক হোসেনের দাবি, ‘‘গোটা ঘটনাটি জোটের তৈরি গল্প। তারা নিজেদের হার বুঝতে পেরে মিথ্যা গল্প ফাঁদছে। এমন ঘটনা ঘটলে তো ওই জায়গাটা দেখলেই বোঝা যেত। আদতে ওরা এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। মানুষ ১৪ তারিখে এর জবাব দিয়ে দেবে।’’
এ দিন দুপুরে আমির মণ্ডলের বাড়িতে নতুন করে গোবর দিয়ে নিকনো হয়েছে দাওয়া। দেওয়ালেও মাঝে মাঝে নিকানো হয়েছে ‘ক্ষতস্থান’। বাড়িতে জনা কয়েক সদস্যকে দেখা গেলেও আমির মণ্ডল বা তার স্ত্রীকে দেখা যায়নি।
কংগ্রেস নেত্রী শাওনী সিংহরায়ের দাবি, ‘‘এ ঘটনার পর পর কয়েকবার আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ তাতে কান দেয়নি।’’ একই আভিযোগ সিপিএম নেতা নারায়ণ দাসের গলাতেও। তাঁর দাবি, ‘‘ওই সময় মাঠে প্রচুর লোক চাষের কাজ করছিলেন। তারা জানিয়েছেন, আবুল মণ্ডলের ছেলে রমজান মণ্ডল ও লিয়াকত মণ্ডলের ছেলে লালন মণ্ডলকে গ্রাম থেকে মাঠের মধ্যে দিয়ে কাঁধে করে হাড়ুরপাড়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ বিরোধীদের দাবি, জখমদের গোপনে কোথাও চিকিৎসা চলছে। পুলিশ ও মহকুমা শাসককে জানাতে গেলে তারা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। ফলে গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে রাজ্য নিবার্চন কমিশনের কাছে জানাবে বামেরা। শনিবারও এই এলাকায় পুলিশের সামনে ৩টি বোমা ফেটেছিল। সেই ঘটনাতেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে এ দিনের ঘটনায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।