লুঠের টাকা-সহ রানাঘাট পুলিশের হেফাজতে তিন দুষ্কৃতী। নিজস্ব চিত্র
পুলিশ ধরেছিল নেহাতই ছিনতাইকারী ভেবে। পরে দেখা গেল, নাম ভাঁড়ানো বিএসএফ জওয়ান।
রানাঘাটে পেট্রোল পাম্পের টাকা নিয়ে যাওয়া এক যুবকের থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ে ধৃত তিন জনের অন্যতম বিবেকেশ্বর মণ্ডল। প্রায় বিশ বছর সে বিএসএফ-এ চাকরি করছে। ৮৪ নম্বর ব্যাটালিয়নে এখন ওডিশায় কর্মরত। পুলিশের দাবি, পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফিরে ছিনতাই করতে গিয়েছিল সে। ধরা পড়ার পরে নাম বলে ‘বিকাশ মণ্ডল’। জেরায় ঠিক নাম বলে এবং অপরাধ কবুল করে সে।
বিবেকেশ্বর, অনুপ হেলা ও সুজিত পত্তনদার— এই তিন ধৃতকে বুধবার রানাঘাট আদালতে তোলা হয়। তাদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার এবং শনাক্তকরণের (টিআই প্যারেড) নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তার পরে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাদের নিজের হেফাজতে চাইতে পারে।
মঙ্গলবার দুপুরে রানাঘাট শহরের মিশন রোডে তন্ময় ঘোষ নামে এক যুবকের মাথায় আঘাত করে, শূন্যে গুলি ছুড়ে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় তিন জন। ‘কালেকশন এজেন্ট’ হিসেবে রোজ নানা পেট্রোল পাম্প থেকে নগদ টাকা নিয়ে তিনি ব্যাঙ্কে পৌঁছে দেন। সে দিনও নিজের মোটরবাইকে ব্যাঙ্কেই যাচ্ছিলেন। একটি বাইকে পিছু ধাওয়া করে এসে তিন জন হামলা চালায়। জখম তন্ময়ের বিবরণ শুনেই রানাঘাট থানা ছাড়াও ধানতলা, গাংনাপুর এবং কুপার্স ফাঁড়িকে সতর্ক করে মহকুমা পুলিশ। আঁইশমালি রাজ্য সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় নোকারি মোড় থেকে বাইকটাকে ধরে ফেলে পুলিশ। তাতে তখন বিবেকেশ্বর আর সুজিত ছিল। অনুপ ছিল না। দু’জনকে জেরা করে পরে তাকেও গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, প্রথমে বেমালুম মিথ্যা পরিচয় দিয়েছিল বিবেকেশ্বর। নাম বলেছিল বিকাশ মণ্ডল। বাড়ি তাহেরপুর নোটিফায়েড এলাকার ডি ব্লকে। কিন্তু, ওই ঠিকানায় ওই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের সন্দেহ হয়। শুরু হয় টানা জেরা। শেষে ভেঙে পড়ে আসল পরিচয় দেয় সে। জানায়, দিন দশেক আগে পুজোর ছুটিতে বাদকুল্লার বাড়িতে এসেছে।
হাঁসখালি ব্লকের বাদকুল্লা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সুরভীস্থানে বাড়ি বিবেকেশ্বরের। তারা দুই ভাই, দুই বোন। ভাই কলকাতায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকে। বিবেকেশ্বরের দুই ছেলেমেয়ে। কিন্তু তাদের বাড়িতে আপাতত তালা ঝুলছে। তারা কোথায় গিয়েছে, তা এলাকার কেউ বলতে পারেননি।
আগে কখনও পুলিশের খাতায় বিবেকেশ্বরের নাম উঠেছিল কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। কেননা, তার বিএসএফ-এ চাকরির আগে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ হওয়ার কথা। দাগি হলে সেখানেই আটকে যাওয়া উচিত ছিল। পুলিশের বক্তব্য, বিশ বছর আগে ঠিক কী হয়েছিল, তা অস্পষ্ট। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।