ফয়দা বিজেপি-র, সতর্ক শাসকেরা

জামিন মেলেনি, অনড় বাসকর্মীরা

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার তেহট্টে দু’টি বাসের রেষারেষির জেরে রাস্তার পাশে নয়ানজুলিকে গিয়ে পড়েছিল একটি বাস। ন’জন মারা যান, জখম হন আশি জনেরও বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০১:২০
Share:

ফাইল চিত্র।

তেহট্টে দুর্ঘটনায় ধৃত চালক জামিন না পাওয়ায় বাস না চালানোর সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন বাসকর্মীরা। আর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাসকর্মীদের একাংশকে নিজেদের দিকে টেনে নিল বিজেপি। তারা কৃষ্ণনগরের বাস শ্রমিকদের মধ্যে সাংগঠনিক শাখা খুলতে সক্ষম হল।

Advertisement

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার তেহট্টে দু’টি বাসের রেষারেষির জেরে রাস্তার পাশে নয়ানজুলিকে গিয়ে পড়েছিল একটি বাস। ন’জন মারা যান, জখম হন আশি জনেরও বেশি। বাসচালক ইন্দ্রজিৎ সর্দারকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল কৃষ্ণনগর আদালত। আর তার জেরে গত শুক্রবার কৃষ্ণনগর থেকে জেলার সমস্ত রুটে বাস বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেন বাসকর্মীরা।

পুলিশ হেফাজতের বুধবার চালক ইন্দ্রজিৎকে ফের আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এ দিন জামিন মঞ্জুর হয়ে গেলে বাসকর্মীরা হয়তো নিরস্ত হতেন। কিন্তু সেটা না হওয়ায় নেতারা নিজেদের মুখরক্ষা করে আন্দোলন থেকে সরে আসতে পারছেন না, কেননা জামিন না হওয়া পর্যন্ত বাসও চলবে না বলে এঁদের একাংশ আগেই হুমকি দিয়েছেন।

Advertisement

তবে প্রশাসন যে বেশি দিন এই অচলাবস্থা চলতে দেবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। রাতে তিনি বলেন, ‘‘জেল-জামিন তো আদালত বুঝবে। তবে নদিয়ায় জন-পরিবহণ স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যে ১৬টি সরকারি বাস নামানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আরও বাস নামবে।’’ ওই বাসগুলির বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? মন্ত্রী বলেন, ‘‘আরটিও-কে বলা হয়েছে, বাস মালিকদের শো-কজ করতে।’’

গোটা নদিয়া জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাসকর্মী আছেন। তাঁদের সিংহভাগই এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। এ দিন বিজেপি যুবমোর্চার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরূপ দাসের সামনে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বাসকর্মী তাঁদের শ্রমিক সংগঠনে যোগ দেন। তার মধ্যে কৃষ্ণনগর-পলাশিপাড়া রুটের সম্পাদক দিলীপ ঘোষের মতো কিছু নেতা গোছের লোকও আছেন। দিলীপের দাবি, “অন্য সংগঠনগুলো শ্রমিকদের কথা ভাবছে না। মালিক ও প্রশাসনের দালালি শুরু করেছে।” অরূপ বলেন, “নিজেদের অধিকার ও নিরাপত্তার এই আন্দোলনে শ্রমিকেরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাই হবে।” করিমপুর রুটের কন্ডাক্টর কাজল চক্রবর্তীর আক্ষেপ, ‘‘এতে শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন হয়ে গেল। তবে আন্দোলন চলবে।’’

বাসকর্মীদের মধ্যে যাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল, তৃণমূল অনুসারী আইএনটিটিইউসি শুরু প্রথম থেকেই এই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। প্রথমে সহমর্মিতা জানালেও পরে সে অবস্থান থেকে সরে আসে সিটু এবং নকশালপন্থীদের এআইসিসিটিইউ। মঙ্গলবার আইএনটিটিইউসির চেষ্টায় করিমপুর, মাজদিয়ায় কয়েকটি রুটে দু’একটি করে বাস চালানো হয়। কিন্তু এ দিন যে-কে-সেই। সিটু নেতাদের মতে, গা-জোয়ারি করে কিছু বাস চালাতে গিয়েই শ্রমিকদের আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে তৃণমূল। যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মালিকদেরও একাংশের সদিচ্ছা না থাকাটা একটা কারণ।”

নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ অবশ্য বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বাস চালাতে চেয়েছি। কথা চলছিল। হঠাৎ কিছু শ্রমিক বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় সমস্যা বাড়ল।” জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত অবশ্য কার্যত মালিকদের কোর্টে বল ঠেলেছেন। তাঁর হুঁশিয়ারি, “এ বার আমরা বাসের রুট পারমিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন