কেটারারের লোক ভালবেসে খাইয়েও দেন

কখনও বা ধরা পড়ার পরে বাড়ির লোকেরাই বলেন, ‘‘কী আর করা যাবে? খাচ্ছে, খাক।’’

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৩
Share:

অঙ্কন: কুনাল বর্মণ

বিয়েবাড়িতে অবাঞ্ছিত অতিথি প্রায়শই ধরা পড়ে জেলা-মফস্সলে।

Advertisement

কখনও বা ধরা পড়ার পরে বাড়ির লোকেরাই বলেন, ‘‘কী আর করা যাবে? খাচ্ছে, খাক।’’

কৃষ্ণনগরের এক মিষ্টির দোকানের বৃদ্ধ কর্মচারী আছেন, যিনি খুব সাবলীল ভাবে প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠান বাড়িতে চলে যান বিনা নিমন্ত্রণে খেতে। শহরের প্রায় প্রতিটি কেটারারের কাছে ওই মুখ পরিচিত। ধরাও পড়েছেন অনেক বার। তবুও স্বভাব বদলায়নি তাঁর।

Advertisement

এমনই গোয়ারি বাজার এলাকার একটি ছেলে আছে যে, অনুষ্ঠান বাড়ির খোঁজ পেলেই স্নান করে ভাল পোশাক পরে খেতে চলে যায় সেখানে। কারণ, খেতে বড় ভালবাসে সে। কেটারারদের পরিচিত এই মুখকে ভালবেসে, অনেক সময়ই তাকে খাইয়ে দেন অনেক কেটারার সংস্থা। অনেকে আবর হয়তো বা বলেন, অনুষ্ঠানের শেষে আসতে।

কেটারার সংস্থার দেববাবুর কাছেই জানা গেল, একটি ছেলে আছে যে খেতে আসে শুধুমাত্র দিনের অনুষ্ঠানে। তার পায়ে চোট আছে। আর কুকুরকেও বড্ড ভয় ছেলেটির। তাই রাতে বেরোয় না। আবার, এক বিধবা মহিলা আছেন যিনি তাঁর ছেলেকে নিয়ে এ ভাবেই বিনা আমন্ত্রণে চলে যান যে কোনও অনুষ্ঠানবাড়ি।

অনুষ্ঠানে কেটারার সংস্থা এই অবাঞ্ছিত অতিথিদের জন্য অনেক সময়েই সমস্যায় পড়ে। নিমন্ত্রিতের হিসাবে গোলমাল দেখা দেয়। নিমন্ত্রিতের সংখ্যা পূর্বনির্ধারিত প্লেটের মধ্যে থাকলে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু যদি তা নির্ধারিত প্লেটের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, সমস্যা হয় তখনই। তখন অনুষ্ঠান আয়োজক বাড়ির লোক প্রশ্ন তোলেন। প্লেটের হিসাবে জল আছে— এমন কথাও কখনও কখনও শুনতে হয় কেটারার সংস্থার লোকেদের।

একই অভিযোগ প্রায় পঁচিশ বছর ধরে কেটারিংয়ের ব্যবসা করে আসা রবীন্দ্রনাথ দাসেরও। তাঁর মতে, বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল বা জনবহুল এলাকায় অবস্থিত লজগুলিতে এই রকম লোক বেশি ঢোকে। আর বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে যেহেতু বরপক্ষ ও কনেপক্ষের অনেক অপরিচিত মানুষ থাকে, সেখানে এমনটা বেশি ঘটে।

কেটারার সংস্থার ছেলেরা জানাচ্ছেন, যখন নিমন্ত্রিতের চাপ খুব বেশি থাকে, ঠিক সেই সময়ে এঁরা খাবার ঘরে ঢুকে চুপ করে বসে যান। আগে কিছু লোক বেশি হলে তেমন কোনও সমস্যা হতো না।

কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির এই বাজারে মাঝারি মানের একটি প্লেটের দাম প্রায় ৫০০ টাকা পড়ে যায়। তাই প্লেটের সংখ্যাও ঠিক করা হয় খুব হিসেব কষেই। এর মধ্যে যদি ১৫টি প্লেটও বেশি হয়, তার দাম মেটাতে হয় অনুষ্ঠান বাড়ির কর্তাকেই। ফলে, প্লেট সংখ্যা নিয়েও এখন খুবই কড়াকড়ি থাকে অনুষ্ঠান বাড়িগুলিতে।

অন্য দিকে, এখন সব ছোট-ছোট পরিবার। অনুষ্ঠান বাড়িতে আগের মতো সব দিক সামলানোর মানুষের বড় অভাব। বেশিরভাগ দায়িত্বই ছেড়ে দেওয়া হয় কেটারার বা ইভেন্টে ম্যানেজমেন্টের লোকেদের হাতে। তাঁরা সে ভাবে আমন্ত্রিত আর অবাঞ্ছিত অতিথির মধ্যে ফারাক করতে পারেন না, কারণ তাঁরা সবাইকে চিনেই উঠতে পারেন না।

তাই সহজেই ঢুকে পড়ে অবাঞ্ছিত অতিথিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন