দুরন্ত হওয়ায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় শৈশব!

বাপ-মা কাজের সূত্রে দিল্লিতে, নানা-নানির ঘেরাটোপে বেড়ে ওঠা বছর আটেকের ছেলেটিকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বযঃবৃদ্ধদের নেই। তাই সকাল সকাল তাঁকে কাঠের খুঁটিতে তালাবন্দি করে রেখে হাঁফ ছাড়েন তাঁরা।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৩
Share:

শিকল খুলে দিচ্ছেন বিডিও।—ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সে যে কিঞ্চিৎ ডানপিটে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তা বলে কি ‘কোনদিন ফাঁসি যাবে নয় যাবে জেলে!’ সে দূরের ব্যাপার, তবে তার আগেই আরমানের শৈশব বাঁধা পড়েছে শিকলে।

Advertisement

বাপ-মা কাজের সূত্রে দিল্লিতে, নানা-নানির ঘেরাটোপে বেড়ে ওঠা বছর আটেকের ছেলেটিকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বযঃবৃদ্ধদের নেই। তাই সকাল সকাল তাঁকে কাঠের খুঁটিতে তালাবন্দি করে রেখে হাঁফ ছাড়েন তাঁরা। জলঙ্গির সাদিখাঁরদিয়াড় এলাকার আরমানের নানা নানি স্রেফ দুরন্ত বলেই নাতিকে এ ভাবে বেঁধে রাখেন খবর পেয়ে রবিবার সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিডিও কৌস্তবকান্তি দাস। বিডিও বলেন, ‘‘খুব অমানবিক ব্যাপার। তবে ওই পরিবারের পক্ষেও ওর উপর সব সময় নজর রাখাও বেশ মুস্কিলের। ফলে আমরা গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে যাতে আরমান স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে তার সমস্ত ব্যাবস্থা করতে হবে। ওর দাদু দিদার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থাও করছি আমরা।’’

ছাড়া পেলেই পাখির মত সে উড়ে বেড়ায় এ পাড়া থেকে ও পাড়া। যে কোনও বাড়িতে ঢুকে এটা ওটা ভেঙে ফেলে। অন্যের গাছে ফল পাড়া থেকে ভরা পুকুর দাপিয়ে সাঁতার। এর-তার গোয়ালে ঢুকে গরু ছেড়ে দেওয়া— দুষ্টুমির শেষ নেই। দিনভর নাতির নামে নালিশ আর তার অবাধ্যপনা সামাল দিতে না পেরে শেষতক তাই বেঁধে রাখাই স্থির করেছিলেন আরমানের নানা।

Advertisement

আরও পড়ুন: শেয়ালের কামড়ে ক্ষত, আতঙ্কে মানুষ

বাঁধের পাড়ে এক ফালি জমিতে পাটকাটির বেড়া আর টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ছোট্ট ঘর মেহের আলির। তাঁদের সঙ্গেই থাকে আরমান। বড় মেয়ে ওজিফা বিবি কাজের খোঁজে পাড়ি দিয়েছেন দিল্লি। আরমান রয়ে গিয়েছে গ্রামে, খুঁটিতে বাঁধা। নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে সকাল থেকে মেহের আলি সেখ ও তার স্ত্রী জালেমা বিবি বেরিয়ে পড়েন মাঠে। আর সেই সকাল থেকে শেকলে বাঁধা থাকে ছেলেটি। মেহেরের কথায়, ‘‘ছাড়া পেলেই উড়ে যায় যে, কি করব বলুন!’’ সোমবার সকালেও খুঁটিতে শিকল আর মস্ত একটি তালা দিয়ে বাঁধাই ছিল সে। মাঝে মাঝেই বলছে ‘আমাকে খুলে দাও আর কখনও পালিয়ে যাব না।’

তবে, সোমবার আরমানের পায়ের বেড়ি খুলেছেন জলঙ্গির বিডিও। আর শেকল খুলতেই আরমান বলে ওঠে, ‘‘সত্যি বলছি, আর পালাব না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন