সিমকার্ড আলো দেখাবে, আশা তদন্তকারীদের

সিসিটিভি ফুটেজে ছবি দেখা গেলেও অপরাধীরা নাগালের বাইরেই। এই অবস্থায় একটি মোবাইলের সিমকার্ড রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তে তাঁদের সাহায্য করতে পারে বলে আশায় বুক বাঁধছেন সিআইডি অফিসারেরা। এ দিন রানাঘাটের ওই স্কুলের এক নিরাপত্তারক্ষী-সহ তিন জনকে জেরা করা হয়। নিরাপত্তারক্ষীর বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি মিললেও রাত পর্যন্ত তাকে অবশ্য গ্রেফতার করা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৫
Share:

সিসিটিভি ফুটেজে ছবি দেখা গেলেও অপরাধীরা নাগালের বাইরেই। এই অবস্থায় একটি মোবাইলের সিমকার্ড রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তে তাঁদের সাহায্য করতে পারে বলে আশায় বুক বাঁধছেন সিআইডি অফিসারেরা। এ দিন রানাঘাটের ওই স্কুলের এক নিরাপত্তারক্ষী-সহ তিন জনকে জেরা করা হয়। নিরাপত্তারক্ষীর বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি মিললেও রাত পর্যন্ত তাকে অবশ্য গ্রেফতার করা হয়নি। এ দিনই উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জে দুই অনুপ্রবেশকারীকে ধরা হয়েছে, যাদের সঙ্গে রানাঘাটের স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া দু’জনের কিছুটা মিল রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তাদের ছবি পাঠানো হয়েছে কলকাতায়, সিআইডি-র কাছে।

Advertisement

চাপের মুখে বুধবার তদন্তভার মুখ্যমন্ত্রী সিবিআইকে দেওয়ার কথা জানালেও কেন্দ্রীয় সংস্থাটি রাত পর্যন্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারাই এখনও তদন্ত করছেন। সিআইডি সূত্রের খবর, কনভেন্ট স্কুল চত্বরে তল্লাশি চালিয়ে একটি সিমকার্ড মিলেছে। সিআইডির দাবি, সিমকার্ডটি কেনার সময় যে ব্যক্তির নাম-ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল, তা ভুয়ো। ফলে সন্দেহ বেড়েছে। সিমকার্ডটি ব্যবহার করে কাকে কাকে ফোন করা হয়েছিল, তা জানতে সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই তদন্ত এগোনো হবে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।

রায়গঞ্জে এ দিন যে দু’জনকে ধরা হয়েছে, তারা পঞ্জাবের ইটভাটায় কাজ করার কথা জানালেও কোনও ট্রেনের টিকিট দেখাতে পারেনি। তারা কোন ইটভাটায় কাজ করে, তা-ও জানাতে পারেনি। ফলে পুলিশের সন্দেহ বেড়েছে। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ মহম্মদ মাজেদ ও মুকুল আলম নামে ওই দু’জনের ছবি সিআইডি-র কাছে পাঠিয়েছে। জেলা পুলিশের বক্তব্য, ওই দু’জনের সঙ্গে রানাঘাট কাণ্ডের ২ ও ৭ নম্বর অভিযুক্তের ছবির কিছু মিল আছে। তবে রাত পর্যন্ত সিআইডি তাদের কিছু জানায়নি।

Advertisement

তদন্তে কতটা এগিয়েছে সিআইডি? গোয়েন্দা সূত্রের খবর, স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া অপরাধীদের ছবি এখনও পর্যন্ত তদন্তে খুব বেশি সাহায্য করেনি। স্থানীয়রা বা স্কুলের সন্ন্যাসিনীরা ছবি দেখে খুব কিছু বলতে পারেননি।

তা হলে গোয়েন্দারা এগোচ্ছেন কী ভাবে? সিআইডি সূত্রের বক্তব্য, তাঁদের কিছুটা আলো দেখিয়েছে এক নিরাপত্তারক্ষীর বয়ানের অসঙ্গতি। এ দিন ওই স্কুলের এক নিরাপত্তারক্ষী এবং বর্ধমান ও রানাঘাটের দুই দুষ্কৃতীকে দুপুরে ভবানীভবনে নিয়ে আসা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন খোদ এডিজি (সিআইডি) রাজীব কুমার। সিআইডি সূত্রের খবর, ওই নিরাপত্তারক্ষীর বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি প্রথমে দাবি করেন, ঘটনার রাত বারোটা নাগাদ তিনি শুয়ে পড়েছিলেন। ভোর চারটেয় তাঁর ঘুম ভাঙে। অথচ, রাতের সিসিটিভি ফুটেজে বারোটার পরে তিন বার তাঁকে টহল দিতে দেখা গিয়েছে।

এক তদন্তকারী অফিসার বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে রাত বারোটার পরে টহলের কথা স্বীকার করলেও তিনি কাউকে দেখেননি বলে ওই নিরাপত্তারক্ষীর দাবি। যদিও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, রাত সওয়া একটা নাগাদ দুষ্কৃতীরা স্কুলের ভিতরে ঢোকে। ওই নিরাপত্তারক্ষীর দাবি, তাঁকে ভোর চারটে নাগাদ দুষ্কৃতীরা বাঁধে। তা হলে দেড়টা থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত ওই রক্ষী কী করছিলেন, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।

নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি এ দিন দুই দুষ্কৃতীকেও দীর্ঘ ক্ষণ জেরা করেন গোয়েন্দারা। সূত্রের দাবি, ওই দু’জন জড়িত বলে প্রত্যক্ষ কোনও প্রমাণ না মিললেও তাদের কাছ থেকে কিছু সূত্র মিলেছে। যা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

সিআইডি-র একটি সূত্রের দাবি, রানাঘাট-কাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে একাধিক ভাষাভাষী লোক রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজের একটি অংশে দুষ্কৃতীদের গলার স্বর ধরা পড়েছে। তাতে খুব অবোধ্য পূর্ববঙ্গীয় ধাঁচে বাংলা কথা শোনা গিয়েছে।

রাজ্য পুলিশের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তভার তড়িঘড়ি সিবিআইকে দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় সিআইডি অফিসারেরা কিছুটা মুষড়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী ভবানী ভবনে গিয়ে রানাঘাট কাণ্ডের ফুটেজ দেখতে চান। অপরাধীদের মুখ ওই ফুটেজ স্পষ্ট ভাবে দেখা যাওয়ার পরেও সিআইডি তাদের পাকড়াও করতে না পারায় তিনি আফসোস করেন বলে জানান এক পুলিশ কর্তা। তদন্তকারীরা জানান, উদ্ধার হওয়া সিসিটিভি ফুটেজটি প্রায় চার ঘণ্টার। সেটিকে কেটে এক ঘণ্টার করা হয়েছে। সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, “ওই ফুটেজ সিডিতে ভরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।” দুষ্কৃতীদের ছবি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন