খেলতে খেলতেই পড়া, রানাঘাটের দয়াবাড়ি প্রাথমিক স্কুলটাই যেন আস্ত একটা রঙিন বই

মাথার উপরে চাঁদ-সূর্য, দেওয়ালে ছুটছে বাইসন

গাছগাছালিতে ঘেরা একফালি পথটা পেরিয়েই হোঁচট খেতে হয়— ঠিকানাটা কি ভুল হল?সিঁড়ির ধাপের এক দিকে লেখা অ থেকে চন্দ্রবিন্দু, অন্য দিকে ১ থেকে ১০০। সিঁড়ি শেষ হলে লম্বাটে বারান্দা। দেওয়াল জুড়ে ছবি। আর ক্লাসরুম?

Advertisement

সুস্মিত হালদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৮
Share:

ছবি: ক্লাসরুমের ছাদে ধরা সূর্য। নিজস্ব চিত্র

গাছগাছালিতে ঘেরা একফালি পথটা পেরিয়েই হোঁচট খেতে হয়— ঠিকানাটা কি ভুল হল?

Advertisement

সিঁড়ির ধাপের এক দিকে লেখা অ থেকে চন্দ্রবিন্দু, অন্য দিকে ১ থেকে ১০০। সিঁড়ি শেষ হলে লম্বাটে বারান্দা। দেওয়াল জুড়ে ছবি। আর ক্লাসরুম?

মাথার উপরে সূর্যের চারপাশে বনবন করে ঘুরছে পৃথিবী। বুধ, শুক্র, মঙ্গল, শনিও পাক খাচ্ছে নিজের কক্ষপথে। দেওয়ালে এক পাশে আবার চাঁদকে একটু একটু করে গিলে নিচ্ছে সূর্য। অন্য দিকের দেওয়াল জুড়ে মানবসভ্যতার ক্রমবিবর্তন। এ ছাড়াও রয়েছে ছড়া, ছবি, অঙ্ক— যেন গোটা স্কুল বাড়িটাই আস্ত একটা রঙিন বই।

Advertisement

রানাঘাটের মিশন রেলগেট লাগোয়া দয়াবাড়ি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা আশ্বস্ত করছেন, ‘‘ঠিকানা ভুল হয়নি। আসলে স্কুলটাকে একটু অন্য ভাবে সাজানো হয়েছে। পড়ুয়ারা এখানে খেলতে খেলতেই সব শিখে ফেলে।’’

কথাটা কিন্তু কথার কথা নয়। প্রথম শ্রেণির দু’জন খুদে বার বার ৫২-এর পরে ৫৪ বলছিল। ক্লাসের শিক্ষক তাকে বকাবকি না করে বললেন, ‘‘তোমরা সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে দু’বার ওঠানামা করে এসো।’’ ফলও মিলল। পড়ুয়ারা হইহই করে ফিরে এসে গড়গড় করে বলে গেল এক থেকে একশো। ছাত্র ও অভিভাবকেরাও এই স্কুল নিয়ে এখন উচ্ছ্বসিত। ২০০৩ সালে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল সাকুল্যে ২৩ জন। সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে এখন দাঁড়িয়েছে ১৩০।

আরও পড়ুন: আড়াই হাজার ভড়ুই উদ্ধার

দয়াবাড়ি স্কুলের প্রধানশিক্ষক অমরেশ বিশ্বাস অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে নিয়ে মনের মতো করে স্কুলটাকে সাজিয়েছেন। আর তার জন্য হাজার পঞ্চাশেক টাকাও খরচ করেছেন শিক্ষকেরাই। অমরেশবাবু জানাচ্ছেন, সিলেবাসকে মাথায় রেখেই সমস্ত ছবি আঁকানো হয়েছে। চোখের সামনে সর্বক্ষণ সেই ছবি দেখতে দেখতে পড়ুয়ারাও সহজে সব কিছু রপ্ত করে ফেলছে।

স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডগুলোও অভিনব। কোনওটা হাতির মতো দেখতে, কোনওটা আবার ভারতের মানচিত্র। কখনও শিক্ষক বলছেন, ‘‘হাতির পেটে এই অঙ্কটা কর দেখি।’’ কখনও আবার কোনও পড়ুয়া বলছে, ‘‘চেন্নাই চিনব না কেন? এই হল তামিলনাড়ু, আর এই তো চেন্নাই!’’

স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা পাঁচ জন। কয়েক মাস আগে এই স্কুলে যোগ দিয়েছেন কৃষ্ণা বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “এমন পরিবেশে পড়াতেও খুব ভাল লাগে।’’ দ্বিতীয় শ্রেণির তসমিনা মণ্ডল, তৃতীয় শ্রেণির জয় সরকারেরা বলছে, “কবে কবে যে ছড়াগুলো মুখস্থ হয়ে গিয়েছে, বুঝতেই পারিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন