মুম্বই থেকে কলকাতা। তার পরে কলকাতা থেকে পুলিশ প্রহরায় বিশেষ বাসে বহরমপুরে এলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। এ বার তাঁরা যে যাঁর বাড়ি যাবেন। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
ভিন্ দেশ থেকে ওঁদের কারও উড়ান নেমেছিল মুম্বইয়ে, কারও বা আমদাবাদ। সৌদি আরব, ওমান, কাতার ফেরত সেই সব পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ভিন রাজ্যের এক ঝাঁক শ্রমিক— মহারাষ্ট্র কেউ বা ট্রেন ধরেছেন বেঙ্গালুরু থেকে।
তবে, হাওড়া কিংবা শিয়ালদহ স্টেশনে তাঁরা নামার পরেই হাঁক শুনেছিলেন, ‘মুর্শিদাবাদের যাঁরা আছেন, তাঁরা এগিয়ে আসুন, আপনাদের জন্য বাস অপেক্ষা করছে।’ জেলা প্রশাসনের তৎপরতায়, বিদেশ এমনকি দেশের করোনা ভাইরাস দীর্ণ এলাকা থেকে গ্রামমুখী শ্রমিকদের ফিরিয়ে এনে সটান হাসপাতালে পরীক্ষা করানো হল রবিবার। জনতা কার্ফুর সকালে বাস বোঝাই এমনই ৭২ জন শ্রমিককে বহরমপুরে ফিরিয়ে এনে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে রাখল মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতর। রবিবার দুপুরে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস, মাতৃসদনে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। তবে তাঁদের কাউকেই এ দিন সন্ধে পর্যন্ত জেলা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়নি।
তবে ওই ৭২ জনের বাইরেও য়ে অনেকেই শনিবার রাতে এবং রবিবার সকালে শিয়ালদহ এবং হাওড়ায় নেমেছেন বলে জানা গিয়েছে। বেলার দিকে বেসরকারি বাসেই তাঁদের নেমেছেন জেলা সদরে। তবে তাঁদের আর পরীক্ষা করানো যায়নি। জানা যায়নি তাঁদের গন্তব্যও। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক তাই গোপন করছেন না তাঁর আশঙ্কা, ‘‘হিসেবের বাইরেও অনেকেই সৌদি আরব কিংবা পশ্চিম এশিয়ার ওই সব দেশ থেকে এসেছেন। কিন্তু তাঁরা নিজেরা সচেতন না হলে আমরা
কী করব!’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর মুর্শিদাবাদ ছাড়াও দুই দিনাজপুর, মালদহ, ঝাড়খন্ডের বেশ কিছু বাসিন্দাও এ দিন জেলা প্রশাসনের ব্যূবস্থাপনায় ওই বাসে বহরমপুরে এসেছেন। পরীক্ষার পরে তাঁদের অনেকেই কোয়রান্টিনে থাকা নিয়ে আপত্তি তোলেন। তবে বুঝিয়েসুঝিয়ে তাঁদের শেষতক ওখানেই পাঠানো হয়েছে বলে খবর। মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে, জেলায় এখন বিদেশ থেকে এসেছেন ৩৫৬ জন। তাঁরা সকলেই স্বাস্থ্য দফতরের নজরবন্দি। ঝাড়খণ্ড সীমান্তে এ দিন পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ হাজার ১১৭ জনকে। তাঁদের মধ্যে মুর্শিদাবাদের ৭ জন, ঝাড়খণ্ডেরও ৭ জন এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ১ জনকে গৃহবন্দি থাকতে বলা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার দেবদাস সাহা বলেন, ‘‘৭২ জনকে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।’’ মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় সংগঠিতভাবে প্রায় ৩০০ জন ভিন রাজ্যে থেকে এ জেলায় ফিরেছেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা ফিরেছেন তাঁদের কথা বলতে পারব না। সে পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ভিন রাজ্য ফেরত লোকেদের কলকাতা বা হাওড়া থেকে নিখরচায় জেলায় ফেরানোর রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে তাঁদের পরীক্ষাও করানো হচ্ছে। রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাঁচটি সরকারি বাসে ভিন রাজ্যে থেকে আসা প্রায় ১৯৭ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মহারাষ্ট্র, মুম্বই ও বেঙ্গালুরু ফেরত ৭২ জন যাত্রীকে মাতৃসদনে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মাতৃসদন চত্বরে কড়া পুলিশি প্রহরা রাখা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, তীর্থ ভ্রমণে যাওয়া লোকজনকেরও পরীক্ষা করা হচ্ছে। রবিবার বহরমপুর শহর ও শহর লাগোয়া এলাকার প্রায় ১০০ জন তীর্থযাত্রী ফেরত দু’টি বাসকে এলাকার লোকজন ঢুকতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। পরে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা তাঁদের পরীক্ষা করানো হয়। রানিনগরের লোচনপুরের এক দল তীর্থযাত্রী শনিবার গ্রাম ঢুকেছেন। গ্রামের লোকজনের চাপে রবিবার দুপুরে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসের সামনে পরীক্ষা করাতে আসেন। মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘হাওড়া ও সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে ভিন রাজ্য ফেরতদের তালিকা করে সরকারি বাসে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এমন ৫টি সরকারি বাসে মুর্শিদাবাদের ১৯৭ জনকে এনে পরীক্ষা করানো হয়েছে।’’