ফাইল চিত্র
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে এমনিতেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে দেশের প্রধানমন্ত্রী রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ‘জনতা কার্ফুর’ আবেদন জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দোকান বাজার খোলা রাখার আশ্বাস দিলেও অনেকেই বাজার, মুদিখানা দোকানে ভিড় করতে শুরু করেছেন। অভিযোগ, লোকজন আতঙ্কে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল, ডাল, লবণ, আলু-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে শুরু করেছেন। তাতে বাজারের দর খানিকটা চড়েছে। দর আরও চড়বে বলে আশঙ্কাও রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানানো হয়েছে, বৃহ্স্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, দোকান বাজার বন্ধ থাকবে না। সব কিছু স্বাভাবিক থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুতের প্রয়োজন নেই।
বহরমপুর থেকে শুরু করে ডোমকল জলঙ্গি, হরিহরপাড়া নওদা, ফরাক্কা সুতি-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা শুরু হয়েছে। এ দিন অরঙ্গাবাদ ও ধুলিয়ানের একাধিক দোকানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মুলত চাল, ডাল, তেল, লবণ ও আলুর দিকে নজর বেশি। বহরমপুরের সৈদাবাদের বাসিন্দা শ্যামল চৌধুরী বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই ঘর ছেড়ে বেরোতে ভয় লাগছে। তার উপরে শুনছি রবিবার কার্ফু হবে। তাই জিনিসপত্র কিনে রাখলাম।’’ শ্যামলবাবুর মতো জেলার অনেকেই বাজারে ভিড় করছেন।
এ দিন সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘দোকান বাজার সব কিছু স্বাভাবিক থাকবে। অযথা আতঙ্কিত হবেন না।’’ একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কেউ কালোবাজারি করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চারি দিকে নজর রেখেছি।’’
শুক্রবার সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্সের বৈঠক বসেছিল। সেখানে ঠিক হয়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেশি না হয়, তা ব্যবসায়ীদের দেখতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাজারে সমস্ত জিনিসপত্রের যোগান স্বাভাবিক রয়েছে। বাজার বন্ধ থাকবে না। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। ব্যবসায়ী কোনওভাবেই দাম বেশি নেবেন না।’’
শুক্রবার সকালে খাগড়ার মুদিখানা ব্যবসায়ী চঞ্চল ঘোষের দোকানে ভাল ভিড় করেছিল। চঞ্চল বলেন, ‘‘একদিকে করোনার আতঙ্ক রয়েছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর একদিনের ‘জনতা কার্ফু’ ঘোষণার জেরে অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন, দোকান বাজার বন্ধ হয়ে যাবে। সে জন্য এ দিন অনেকেই মুদিখানার সামগ্রী কিনেছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা লোকজনকে বলছি এমন কিছু ঘটেনি। দোকান বাজার স্বাভাবিক থাকবে। তার পরেও লোকজন আসছেন।’’
বহরমপুরের চুয়াপুরের পাকুড়িয়ার মুদিখানা ব্যবসায়ী নির্মল মোদক বলেন, ‘‘জিনিসপত্রের দাম একই রয়েছে। তবে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। ঘর থেকে বেরতে পারবেন কিনা ঠিক নেই ভেবে অনেকে মুদিখানার জিনিসপত্র কিনে নিচ্ছেন। তবে আমরা খরিদ্দারদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’’ বহরমপুরের কান্দি বাস্টস্ট্যান্ডের মুদিখানা ব্যবসায়ী বাচ্চু মোদক বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন থেকে খরিদ্দার এসে চাল ডাল তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বেশি করে নিচ্ছেন। আতঙ্ক থেকেই এসব করছেন।’’ অরঙ্গাবাদের মিলন দাসের মুদির দোকানে মুদিখানা সামগ্রীর সঙ্গে আলুও থাকে। শুক্রবার বিকেলে মিলন দাস বলেন, ‘‘এদিন আলু চালু ও লবণ প্রায় দ্বিগুন বিক্রি হয়েছে। আতঙ্ক থেকে এ সব হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’’ তাঁর আশঙ্কা, চাহিদা যেমন বাড়ছে, তাতে জোগানে টান পড়বে। তাতে দর কিছু হলেও বাড়বে।