State News

জিনারুলের গ্রামে শোকের মধ্যেই স্বস্তি

শনিবার রাতে জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে সৌদি আরব থেকে ঘরে ফেরেন গ্রামের ছেলে জিনারুলের। চারিদিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক।

Advertisement

মৃন্ময় সরকার

নবগ্রাম শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২০ ০৩:৩৪
Share:

মৃত জিনারুন হক। —ফাইল চিত্র।

শোক যেমন রয়েছে, তেমনই স্বস্তির হাসিও ফুটেছে মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের কিরীটেশ্বরীর পলাশপুকুর গ্রামে। জিনারুল হকের করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়নি শুনে পরিজনেরা উদ্বেগ থেকে বেঁচেছেন। জিনারুলের বাবা জহুরুল শেখ বলেন, ‘‘আত্মীয় স্বজনেরাও আতঙ্কে বাড়িতে আসছিলেন না। রাতে গ্রামবাসীরাও কেউ ছিলেন না। সবারই তো ভয় ছিল। এখন করোনা হয়নি জানতে পেরে, আত্মীয়স্বজনরা একে একে দেখা করতে আসছেন।’’

Advertisement

শনিবার রাতে জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে সৌদি আরব থেকে ঘরে ফেরেন গ্রামের ছেলে জিনারুলের। চারিদিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক। প্রচণ্ড উদ্বেগ ছড়ায় পলাশপুকুরে। রবিবার তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। জিনারুলের যে দুই আত্মীয় তাঁকে কলকাতা থেকে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদেরও ওয়ার্ডে রেখে নজরদারি শুরু হয়। এর মধ্যেই রবিবার রাতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল থেকে জিনারুলের দেহ কফিনবন্দি হয়ে বাড়িতে পৌঁছয়। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মতো কফিনসহ মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়। তখনও পর্যন্ত ধারণা ছিল, করোনা ভাইরাসের জন্যই জিনারুলের মৃত্যু হতে পারে। তাই রবিবার সন্ধ্যা থেকেই নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল গোটা গ্রাম। পলাশপুকুর গ্রামের চার মাথার মোড়ে নিমেষে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।

সোমবার সকালে জিনারুলের মৃত্যুর রিপোর্ট প্রকাশ পেতে স্বস্তি ফিরেছে সারা এলাকায়। বাড়িতে জিনারুলের বাবা, মা, দুই ভাই, স্ত্রী এবং দুই কিশোর পুত্র রয়েছে। স্ত্রী রোশনি বিবি বলেন, ‘‘গত বছর সৌদিতে গিয়ে রক্তে অতিরিক্ত শর্করা ধরা পড়ে। কিন্তু এ ভাবে ও আমাদের ছেড়ে যাবে, বুঝতে পারিনি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী বিকাশ

স্বস্তি এলেও, আতঙ্ক অবশ্য পুরোপুরি কাটেনি। জিনারুলের বাড়ির সামনেই একটি প্রাথমিক স্কুলে ছুটির দিনগুলোতে সকাল থেকেই গ্রামের বাচ্চারা খেলতে শুরু করে। এ দিন সেই চেনা দৃশ্যের দেখা মেলেনি। তবে জিনারুলের আত্মীয়দেরও একে একে ছেড়ে দেওয়ার পরে বিকেলে গ্রাম খানিকটা স্বাভাবিক। স্থানীয় তাজরুল শেখ বলেন, ‘‘করোনায় জিনারুলের মৃত্যু হয়নি সেটা শুনেছি। তবে একটু আতঙ্ক তো এখনও আছেই।’’

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে গ্রাম থেকে আনাজ কিনে বাজারে বিক্রি করতেন জিনারুল। তার পরে প্রথমে ৩ বছর ৮ মাসের চুক্তিতে সৌদি যান। চুক্তি শেষ হয়ে গেলে আড়াই মাসের জন্য বাড়িতে আসেন। কাঁচা মাটির বাড়ি থেকে পাকা বাড়ি বানান। গত বছর ফের এক বছরের চুক্তিতে সৌদি যান। রোশনি বিবি বলেন, ‘‘গত বছর তাঁর রক্তে শর্করা ধরা পড়ে। সেই থেকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হত। মাস কয়েক আগে কাজের জন্য জায়গা বদল করতে হয়। নতুন যে জায়গায় থাকতেন, সেখানে তেমন কোনও সুবিধা ছিল না। খাওয়ারও খুব কষ্ট ছিল। আমাকে ফোনে সব কথা বলতেন। আরেক ফাগুনে গেল, এই ফাগুনে এলো। শেষ মুখটুকুও দেখতে পেলাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন