ফাইল চিত্র
ওদের কেউ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, কেউ হোটেলে রান্নার কাজ করেন, কেউ সাফাইকর্মীর কাজ করেন। লকডাউন শুরু হওয়ার পরে তাঁদের সবার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের কেউ মালদহের, কেউ নদিয়ার, কেউ মুর্শিদাবাদের তো কেউ বসিরহাটের। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার তিনেক পরিযায়ী শ্রমিক আটকে আছে বেঙ্গালুরুতে। বেঙ্গালুরুর কুন্দলাহালী গেটের কাছে লেবার কলোনিতে পরিবার নিয়ে কেউ সাত বছর তো কেউ দশ বছর বাস করেন। লকডাউন পর্ব শুরুর পর এদের কাছে স্থানীয় বাম যুব সংগঠন ও কর্নাটক বাঙালি কল্যাণ সমিতি যৌথ ভাবে শনিবার খাবার পৌঁছে দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন আটকে যাওয়া ওই শ্রমিকরা।
তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য থেকে কোনও সাহায্যই এখনও পর্যন্ত তাদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। তাঁদের দাবি, পৌঁছয়নি কর্নাটক সরকারের তরফ থেকেও কোনও সাহায্য মেলেনি। আটকে থাকা এই শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় বারোশো জন শ্রমিক মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া, ডোমকল, বেলডাঙা, বালি ১ ও ২ পঞ্চায়েত ও জলঙ্গির বাসিন্দা। তেমনই নদিয়ার কালিগঞ্জ, করিমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাটের প্রায় আটশো জন শ্রমিক ওই কলোনিতেই ঘরবন্দি হয়ে আছে। মালদহের কালিয়াচক, উত্তর মালদহ, দক্ষিণ মালদহের প্রায় সাতশো পরিযায়ী শ্রমিক এই মুহূর্তে সেখানে পরিবার নিয়ে আতান্তরে আছেন বলে সূত্রের খবর। তাঁরা না পারছেন ফেরত আসতে, না পারছেন ওখানে থাকতে। ২ নম্বর বালি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সামারুল মণ্ডল বলেন, “আমাদের খাবার জোগাড় করতে অসুবিধা হচ্ছে। কাজ বন্ধের আগে যে টাকা রোজগার করেছিলাম, তা দিয়ে বেশি দিন চলবে না। চালের দাম ছিল ৩৫ টাকা, আজ সেটা ৭৫টাকা কেজি হয়ে গিয়েছে। আলু ২০ টাকা থেকে হয়ে গিয়েছে ৭০ টাকা তা হলে কী করে চলবে বলুন।”
এই অবস্থায় তারা রাজ্যে ফিরে আসতে চাইছেন। কর্নাটক বাঙালি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুল জাফফার মণ্ডল বলেন, “আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছি ওদের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু তা সামান্যই। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ালে অন্তত এদের না খেয়ে মরতে হবে না।”
করোনাভাইরাস ওই কলোনিতে ছড়িয়ে পড়লে পরিবার নিয়ে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিক্ষিপ্ত ভাবে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হরিহরপাড়া থানার শতাধিক শ্রমিক একই রকম আশঙ্কায় দিন গুনছেন বলে নানা সূত্রে জানা গিয়েছে। ডোমকল, জলঙ্গিরও কয়েকশো শ্রমিক ছত্তীসগঢ়, কেরল, কর্নাটকের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছেন। খাবারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভাষাগত সমস্যা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। জলঙ্গির বাসিন্দা রফিকুল বিশ্বাস বলেন, “ঘরের খাবার ফুরিয়েছে। বাইরে বেরোনো সম্ভব হচ্ছে না। কী করব জানি না!”