প্রতীকী ছবি।
স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তিনি আর একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষক বাবার ‘অপরাধ’ বলতে এইটুকুই। বাবার সেই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি তিন ছেলে।
শেষ পর্যন্ত তারা বাবার প্রেমিকাকেই অপহরণ করে বসে। বুধবার সেই মামলায় কান্দি ফাস্ট ট্রাক আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় তিন ছেলেকে সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।
সরকারি আইনজীবী সালাউদ্দিন সিরাজ জানান, সম্পত্তি সংক্রান্ত একটি মামলায় কান্দি আদালতে এসে খড়গ্রামের বিপত্নীক ওই শিক্ষকের সঙ্গে এক মহিলার আলাপ হয়।
ওই মহিলারও তখন স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল। দু’জনেই জড়িয়ে পড়েন প্রেমের সম্পর্কে। কিছু দিন পরে শিক্ষক ওই মহিলাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন ও তাঁরা একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
ওই শিক্ষকের তিন ছেলে এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। ফলে বাড়িতে শুরু হয় অশান্তি। এ দিকে, শিক্ষকও ছেলেদের কথায় কর্ণপাত না করে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। শেষ পর্যন্ত ২০০২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাবার প্রেমিকাকে অপহরণ করে তিন ছেলে। খড়গ্রাম থেকে ওই মহিলাকে তারা নিয়ে যায় বর্ধমানে।
ওই শিক্ষক তিন ছেলের নামেই খড়গ্রাম থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই শিক্ষকের প্রেমিকাকে নিয়ে গিয়ে বর্ধমানে রাখা হয়েছে। সেই মতো বর্ধমানের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার ১৮ দিন পরে ওই মহিলাকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় তিন ছেলেকেও। তার পর থেকে শিক্ষকের তিন ছেলে জামিনে মুক্ত ছিল।
সরকারি আইনজীবী আরও জানান, ২০০৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে টানা ১৫ বছর এই মামলা চলে। ঘটনার পর থেকে তিন ছেলেই আলাদা থাকত। বুধবার বিচারক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় অপহরণের অপরাধে তিন ছেলেকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। এ ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের অতিরিক্ত কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক।
ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই শিক্ষককের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই ছেলেদের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য শুরু হয়। তাঁদের মা মারা যাওয়ার জন্য ওই শিক্ষককেই দায়ী করতেন তাঁর ছেলেরা। এমন অবস্থায় ওই শিক্ষকের নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াটা ছেলেরা মানতে পারেনি। তাই বলে যে তারা ওই মহিলাকে অপহরণ করবে, সেটাও কেউ ভাবতে পারেননি।