স্বর্ণ-মৃগ লাগামছাড়া!

হঠাৎ করে সোনার দর লাফিয়ে কয়েক হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ সোনার দোকানমুখো হচ্ছেন না।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

এত খারাপ সোনার বাজার শেষ কোন পুজোয় এসেছে মনে করতে পারছেন না স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

সোনার প্রতি এমনিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মহিলার আলাদা টান। প্রতি বছরই পুজোর কেনাকাটার তালিকায় অনেকেই অল্প হলেও একটা সোনার জিনিস রাখতেন। বিক্রিবাট্টা জমে উঠত এই সময়টায়। কিন্তু গত আগস্টের মাঝমাঝি থেকে চড়তে শুরু করেছিল সোনার দর। এক মাসের মধ্যে দশ গ্রাম সোনার দাম একত্রিশ হাজার টাকা থেকে ঊনচল্লিশ হাজার টাকায় পৌঁছে যায়। দামের ছ্যাঁকায় সাধারণ মধ্যবিত্ত আর গয়না কেনার কথা ভাবতে পারছেন না। কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে সোনার বাণিজ্য। সেকরাদের কাছে নিতান্ত প্রয়োজনের বিয়ের গয়না ছাড়া অন্য কিছুর অর্ডার নেই। সেই বিয়ের গয়নার বায়নার পরিমাণও কমেছে চোখে পড়ার মতো। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি সোনার দাম ঊনচল্লিশ হাজার থেকে কমে সাঁইত্রিশ হাজারের মতো হলেও পুজোর বাজারে সোনাপট্টিতে খরিদ্দারদের ফেরা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

লিটন পাল, বাদল দফাদার কিংম্বা অশোক পালের মতো ছোট স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দোকান তালা পড়েছে। নিরুপায় হয়ে তাঁদের কেউ-কেউ জেলা সদরে টোটো চালাচ্ছেন বা গেঞ্জি কারখানার ঠিকা শ্রমিকের কাজ নিয়েছেন। ছবিটা করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ থেকে নাকাশিপাড়া – সর্বত্র একই রকম। নিস্তব্ধ সোনাপট্টিতে বহু দোকান বন্ধ। বড়-বড় দোকানও মাছি তাড়াচ্ছে। চিন্তিত মুখে কাউন্টারের চুপ করে বসে আছেন ব্যবসায়ী। অখিল ভারতীয় স্বর্ণকার সংঘের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্যের কথায়, “অর্থনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হওয়া স্বত্ত্বেও স্বর্ণ ব্যবসায়ী, কারিগর, শিল্পী—সকলেই অবহেলার শিকার। আজকের এই ক্ষয়িষ্ণু দশা তারই চরম পরিণতি।”

Advertisement

হঠাৎ করে সোনার দর লাফিয়ে কয়েক হাজার টাকা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ সোনার দোকানমুখো হচ্ছেন না। এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘পুজোয় এমনিতেই প্রত্যেক পরিবারে সব সদস্যের জন্য এমনকি আত্মীয়দের জন্য জামাকাপড় কিনতেই হয়। তার পর অনেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে রাখতেন সোনা কিনবেন বলে। সোনার দাম এত বেড়েছে যে জামাকাপড় কেনার পর যেটুকু টাকা পড়ে থাকছে তা দিয়ে ছোটখাট সোনার জিনিসও মানুষ কিনতে পারছেন না।’’ নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র যুগ্ম সম্পাদকের অন্যতম গোকুলবিহারী সাহা-র কথায়, “পুজোর মরসুমে সোনার উজ্জ্বলতা কমে গেলে সেটা গোটা বাজারের পক্ষেই ক্ষতিকর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন