দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। তারকনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন পরে উদ্ধার হল শিশুর মৃতদেহ। বুধবার সকালে বাড়ির কাছেই স্কুল সংলগ্ন নির্মীয়মাণ বাড়ির ভিতর থেকে দেহটি মেলে।
পুলিশ জানায়, পাঁচ বছরের ওই শিশুর নাম অর্ণব সরকার। বাড়ি নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার তারকনগর গ্রামে। শিশুটির মুখে পলিথিন ব্যাগ বাঁধা ছিল। শ্বাসরোধ করে তাকে মারা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, অন্য দিনের মতোই সোমবার বাড়ি থেকে একটু দূরে বেসরকারি স্কুলে পড়তে গিয়েছিল অর্ণব। সকাল ৯টা নাগাদ স্কুল ছুটি হয়। কয়েক মিনিট দেরিতে ছেলেকে নিতে এসেছিলেন মা দীপ্তি সরকার। ছেলেকে দেখতে না পেয়ে তিনি আশপাশের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ মেলেনি। কৃষ্ণগঞ্জ থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ আশপাশের গ্রামে মাইকে প্রচার চালায়।
পরিবার সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ অর্ণবের বাবার মোবাইলে ফোন করে পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। শিশুর কাকা পাভেল সরকারের অভিযোগ, ‘‘ওই ফোনে দাদাকে বলা হয়, পুলিশকে জানিয়ে লাভ হবে না। দাদা পরে ফের ওই নম্বরে ফোন করলে বলা হয়, তিনি নাকি ওই লোকটির ব্যবসায় অনেক ক্ষতি করে দিয়েছেন। তাই টাকা দিতে হবে।’’ পরিবারের দাবি, দুপুরে আবার ফোন করে বলা হয়, অর্ণবের দিদির হাতে টাকা দিয়ে বগুলা স্টেশনের ওভারব্রিজের উপরে যেন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেই মতো তার দিদি ও মামার মেয়ে টাকা নিয়ে দুপুর ২টোর মধ্যে ওভারব্রিজে চলে যায়। কিন্তু বিকেল ৪টের মধ্যেও কেউ না আসায় তারা ফিরে যায়। তার পর থেকেই অপহরণকারীর মোবাইল বন্ধ ছিল। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ আবার অর্ণবের বাবার মোবাইলে ফোন আসে। পাভেলের অভিযোগ, ‘‘ওরা দাদাকে ফের টাকার কথা বলে। দাদা অর্ণবের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ওরা ফোনে একটা বাচ্চার সঙ্গে কথাও বলায়। কিন্তু দাদা বুঝতে পারেন, সে অর্ণব নয়।’’
এরই মধ্যে স্কুল সংলগ্ন ওই বাড়ির ভিতর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে এলাকার মানুষ ঢুকে একটা ঘরের বাঙ্কারে বস্তা বন্দি অবস্থায় শিশুটির দেহ পান। খবর পেয়ে হাঁসখালি ও কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ এলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ঘিরে ধরে তদন্তকারী কুকুর আনার দাবি তোলে। বিএসএফ-এর কুকুর নিয়ে এনে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কুকুরটি স্কুলের আশপাশে ঘোরাফেরা করে চলে যায় তারকনগর স্টেশনের দিকে। সেখান থেকে বগুলার রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে। কিছু দূর যাওয়ার পরে অবশ্য কুকুরটি থেমে যায়।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান স্কুলের আশপাশের কেউ এই খুনে যুক্ত। বাইরে থেকেও দু’তিন জন এসে থাকতে পারে। পুরোনো শত্রুতার জেরে এই খুন এবং পরিচিত কেউ এই খুনে যুক্ত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। শিশুটির বাবা ননীগোপাল সরকার কলকাতায় মণ্ডপ তৈরির কাজে কারিগর সরবরাহ করতেন। কিন্তু বছরখানেক আগে তিনি তা বন্ধ করে ভুষি মালের ব্যবসা শুরু করেন। মাস কয়েক আগে তিনি কিছু জমিও কিনেছেন।
অর্ণবের স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের ধীমান সরকার বলেন, ‘‘এই ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের যেন কঠিন সাজা হয়। এতে আমরা কোনও ভাবেই রাজনৈতিক রঙ লাগতে দেব না।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে যান কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। তিনি অনুরোধ করলেও গ্রামবাসীরা মৃতদেহ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। বাধ্য হয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায়, অতিরিক্ত জেলাশাসক উৎপল ভদ্র। তারা অপরাধীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে বিকেল প্রায় পৌনে ৬টা নাগাদ গ্রামবাসীরা মৃতদেহ পুলিশের হাতে তুলে দেন। মাসকয়েক আগে পাশেই হাঁসখালি থানার গাঁড়াপোতা ও বড় চুপড়িয়া গ্রামে একই ভাবে দু’টি শিশুকে খুন করে পাটখেতের ভিতরে ফেলে রাখা হয়েছিল। এ বারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।